হাতেখড়ির পরেই বাঙালির হাতে প্রথম যে বইটি উঠে আসে, সেটা ‘বর্ণপরিচয়’। তাঁর বর্ণপরিচয়ের হাত ধরেই বাংলা দেখেছিলো শিক্ষার নবজাগরণ ।আজ সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৮তম জন্মদিন। ১৮২০ সালের আজকের এই দিনেই (২৬ সেপ্টেম্বর) অবিভক্ত ভারতের মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ছিলেন ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী।
পাঁচ বছর বয়সে সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় বিদ্যাসাগরের পড়াশোনা শুরু। আট বছর বয়সে বাবার সঙ্গে হেঁটে তিনি কলকাতা যান এবং শিবচরণ মল্লিকের পাঠশালায় এক বছর পড়েন। পরে সংস্কৃত কলেজে ১২ বছর অধ্যয়ন করেন এবং ব্যাকরণ, কাব্য, অলংকার, বেদান্ত, স্মৃতি ন্যায় ও জ্যোতিষশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এসব বিষয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন। তিনি ১৮৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সঙ্গে আইন পরীক্ষাও সমাপ্ত করেন। পড়ালেখা শেষে ১৮৪১ সালে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ৫ বছর পর ১৮৪৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে যোগ দেন। ১৮৫১ সালে তিনি এ কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে নিযুক্ত হন।
বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক ও ব্যাখ্যাকারী। বাংলা গদ্যকে সরল ও আধুনিক করার ক্ষেত্রে তার অবদান অতুলনীয়। তিনি প্রকৃত অর্থে বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ ও সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘বর্ণপরিচয়’, ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ প্রভৃতি। এছাড়া তিনি অনুবাদ করেন ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’ (হিন্দি থেকে), ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (শেকসপিয়ারের কমেডি অব এরস)।
বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, নারী শিক্ষা ইত্যাদি কাজে বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সংস্কৃতি শিক্ষা এবং দর্শনে অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে ক্যালকাটা সংস্কৃত কলেজ বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করে। দরিদ্র ও দুর্বলের জন্য তার মন সবসময় কাঁদত। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পরে তাকে দয়ার সাগর উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৮৫৬ সালে ভারতে বিধবা বিবাহ আইন পাসের পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই কলকাতার মাটিতে পরলোকগমন করেন তিনি।
আজ, বুধবার বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিজেপির ডাকা বাংলা বনধে যাতে অনুষ্ঠানে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, সেই জন্য রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের তরফে কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবেন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কলকাতা পুরসভার তরফে ৫ নম্বর বরো লেবুতলা পার্কের কাছে পুর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।