একবার কলকাতা থেকে মুম্বই যাচ্ছিলেন বিখ্যত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড থম্পসন। আচমকা দেখেছিলেন তাঁর প্রথম শ্রেণির কামরায় এলাহাবাদ স্টেশনে এক বাঙালি ভদ্রলোক উঠে পড়েছেন। উঠেই তিনি শুরু করেছিলেন কমলালেবু খাওয়া। থম্পসন ভেবেছিলেন এই গেল! বাঙালি ব্যাটা এ বার গোটা কামরাটা না কমলালেবুর খোসা ছড়িয়ে নোংরা করে ফেলে। কিন্তু তেমন কিছুই তো ঘটেনি। সেই বাঙালি ভদ্রলোকটি একটি প্যাকেটে তুলে রেখেছিলেন কমলালেবুর খোসা। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন থম্পসনও। শুরু হয়েছিল আলাপ। ইতিহাস নিয়েই শুরু হয়েছিল তাঁদের কথাবার্তা। কিন্তু খানিক পরেই দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান – ভূ-ভারতে যতগুলি বিদ্যার শাখা আছে, তা সবই উঠে আসতে শুরু হয়েছিল তাঁদের আলাপে। শেষে যেটা দাঁড়িয়েছিল, সেটা ঠিক আলাপ নয়, কারণ একতরফা বাঙালি ভদ্রলোকটিই বলে চলেছিলেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড শুধুই মুগ্ধ শ্রোতা হয়ে ছিলেন। মুম্বই স্টেশনটাও যেন কেমন তাড়াতাড়ি চলে এসেছিল। নামার সময় থম্পসন বাঙালি ভদ্রলোককে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আপনার নাম জানতে চাইছি না। ভারতবর্ষে একজনই আছেন, যাঁর প্রজ্ঞা এমন প্রসারিত। আমি নিশ্চিত, আপনিই সেই ব্রজেন্দ্রনাথ শীল।’’
‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়’ তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘‘তাঁহার ন্যায় পণ্ডিত লোক বহু শত বৎসর ভারতবর্ষে জন্মে নাই এবং শীঘ্রই যে জন্মিবে তাহাও আমার মনে হয় না৷’’ ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্ত’ জানিয়েছিলেন, ‘‘সক্রেটিস বংশের শেষ কুলপ্রদীপ’’৷ ‘চলন্ত বিশ্বকোষ’-এর মত বিশেষণে ভূষিত করেছিলেন ‘বিনয় সরকার’। ব্রজেন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর ‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ’ লিখেছিলেন, “… ‘সর্ববিদ্যাবিশারদ’ বলিয়া আখ্যা যদি কাহাকেও নিঃসংশয়ে দেওয়া যায় তবে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ তাহার উপযুক্ততম পাত্র।” (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৩৮ সাল) ১৯৩৫ সালে তিনি ৭২ বছর বয়সে পদার্পণ করলে ভারতীয় দর্শন কংগ্রেস এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ‘আচার্য শ্রীযুক্ত ব্রজেন্দ্রনাথ শীল সুহৃদবরেষু’ শীর্ষক এক প্রশস্তিবাণী প্রেরণ করেছিলেন। কবিগুরু সেই প্রশস্তিবাণীতে লিখেছিলেন –
‘‘জ্ঞানের দুর্গম উর্ধ্বে উঠেছে সমুচ্চ মহিমায়
যাত্রী তুমি, যেথা প্রসারিত তব দৃষ্টির সীমায়
সাধনা-শিখরশ্রেণী …’’
সাধে কি আর তাঁকে বলা হত ‘চলমান বিশ্ববিদ্যালয়’! ব্রজেন্দ্রনাথের শৈশব কেটেছিল খুব কষ্টে। শৈশবেই তিনি মাতৃহারা হয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বাবার মৃত্যু দাদা ও দুই বোন সহ ব্রজেন্দ্রনাথকে ঠেলে দিয়েছিল চরম অসহায়তার মধ্যে। এই অবস্থায় তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন মাতুলালয়ে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে তাঁদের মাতামহ মারা যাওয়ায় তাঁরা পুণরায় অনাথ হয়ে পড়েছিলেন। বাধ্য হয়ে ব্রজেন্দ্রনাথের দাদা রাজেন্দ্রনাথ ভাইবোনদের ভরণপোষনের দায়িত্ব নিতে পড়াশুনা ছেড়ে অতি সাধারণ একটা চাকরিতে যোগদান করতে হয়েছিল। এভাবে রাজেন্দ্রনাথ ভাইবোনদের জন্য ত্যাগ স্বীকার না করলে হয়তো এই ব্রজেন্দ্রনাথকে দেশবাসী কোনওদিনই পেতেন না।
একদিন জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল স্কটিশ চার্চ কলেজের শিক্ষকমহলে। সবের মূলে ছিলেন একটি ছাত্র। তখন মাস্টার্সে দর্শন অথবা অঙ্ক পড়ার ব্যবস্থা বহাল ছিল কলেজে। ছেলেটি অঙ্ক আর দর্শন দুটিতেই খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। গোলমাল বেঁধেছিল অঙ্কের তখনকার বিখ্যাত অধ্যাপক গৌরীশঙ্কর দে আর দর্শনের উইলিয়াম হেস্টি সাহেবের মধ্যে। দু’জনেরই দাবি ছিল, ছাত্রটি পরীক্ষা দিক তাঁদের বিষয়ে। ওদিকে ছাত্রটি পড়েছিলেন মহা ফাঁপরে। শেষমেশ ছাত্রটি স্থির করেন যে তিনি অঙ্কেই মাস্টার্স করবে। ওদিকে এই বিতর্ক যখন চলছিল তখন সেই ছাত্র মিউজিয়ামে বসে বায়োলজি ও অ্যানথ্রোপলজি পড়তে মত্ত ছিলেন! এ দিকে ফর্ম পূরণের দিন আরেক গন্ডগোল হয়েছিল। পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করার সময়ে সম্ভবতঃ হেস্টি সাহেবের মুখটা বোধহয় মনে পড়ে গিয়েছিল সেই ছাত্রের। ফলে ফর্মে বিষয়ের জায়গায় তিনি অঙ্কের বদলে লিখে ফেলেছিলেন দর্শন। ওদিকে তিনি তো প্রস্তুতি তো নিয়েছিলেন অঙ্কের পরীক্ষার জন্য। দ্বিতীয় বার ফর্ম ফিলাপের উপায় ছিলনা। শিক্ষকেরা ঘোর দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রটি অবিচল ছিলেন। পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা গিয়েছিল ছাত্রটি দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পাশ করেছেন। ছাত্রের নাম – ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। পরের জীবনে যাঁর পরিচয় হয়েছিল এক বিখ্যাত দার্শনিক বলে।
ঊনবিংশ শতাব্দির ষাটের দশক সময়টা ছিল বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময়। বাংলায় তখন বেগবতী ‘নবজাগরণ’ স্রোতস্বিনী। দু-চার বছর আগে-পরে জন্ম নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ-প্রফুল্লচন্দ্র -উপেন্দ্রকিশোর-নরেন্দ্রনাথ-রামেন্দ্রসুন্দর। ঠিক ঐ সময়েই উত্তর-কলকাতাতে ১৮৬৪ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী মহেন্দ্রনাথ শীল ও রাধারানী দেবীর দ্বিতীয় সন্তান ব্রজেন্দ্রনাথ শীল – যাঁর জ্ঞানপ্রতিভাকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে প্রফুল্লচন্দ্র, সমকালীন সমস্ত বিদগ্ধ পন্ডিত মানুষ।
তিনি থাকতেন উত্তর কলকাতার রামমোহন সাহা লেনে। বাবা, মহেন্দ্রনাথ শীল ছিলেন পেশায় ব্যবহারজীবী। তাঁর আগ্রহ ছিল দর্শন, অঙ্ক আর ভাষার চর্চায়। আর ঝোঁক ছিল বেহালা বাজানোয়। কিন্তু বাবার ছায়া আর ক’দিন পেয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ! তাঁর বয়স যখন মাত্র ৮ বছর, তখন হঠাৎ গত হয়েছিলেন তাঁর পিতৃদেব। দিন কয়েকের মধ্যে মা রাধারানিও মারা গিয়েছিলেন। বাড়িতে তখন ছোট্ট ব্রজেন্দ্রনাথ, তাঁর থেকে বছর দশেকের বড় দাদা রাজেন্দ্রনাথ শীল আর দু’জন ছোট বোন। ভাগ্যিস তাঁদের ঠাঁই হয়েছিল মামার বাড়িতে! সংসারের হাল ধরেছিলেন বড় ছেলে রাজেন্দ্রনাথ। পড়াশোনা ছেড়ে ঢুকে পড়েছিলেন অল্প মাইনের চাকরিতে। কায়ক্লেশে জীবন চলছিল ভাইবোনদের। কিন্তু শোক? কিছুতেই যেন সেটা পিছু ছাড়েনি ব্রজেন্দ্রর।
ছাত্রবেলার ওই অভূতপূর্ব কাণ্ডে জড়ানো ব্রজেন্দ্রনাথ বরাবরই অদ্ভুত প্রকৃতির ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই কোনও একটি মাত্র বিষয়ে তাঁর মন টেকেনি। অন্ততঃ দু’টি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। ব্রজেন্দ্রনাথ তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বীজগণিতটা তাঁর ভীষণ ভাল লাগত। তাঁর থেকে উঁচু ক্লাসের জটিল অঙ্কগুলো পর্যন্ত নিমেষে কষে ফেলতেন। বন্ধু থেকে মাস্টারমশাই সকলেই ভীষণ অবাক হতেন। এনট্রান্স পরীক্ষায় ব্রজেন্দ্রনাথ বৃত্তি পেয়েছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশনে। ব্রজেন্দ্রনাথের অঙ্ক-প্রতিভা তত দিনে চাউর হয়ে গিয়েছিল সব মহলেই। আচমকাই ছন্দপতন ঘটিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। অঙ্কে যেন তেমন আর টান অনুভব করছিলেন না ব্রজেন্দ্রনাথ। উল্টে সেই পুরনো প্রেম, দর্শন শাস্ত্রে তাঁর অনুরাগ বাড়ছিল। সেক্ষেত্রে অবশ্য বড় কারণ ছিলেন সেই হেস্টি সাহেব। ক্লাসে তাঁর বড় ভাল লাগত অধ্যক্ষ হেস্টির পড়ানো। কিন্তু মাস্টারমশাই নিজেই বুঝতে পারেননি এই ছাত্রই তাঁকে বিস্মিত করবে। হেস্টি একদিন লজিকের একটা অত্যন্ত জটিল বই নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ছাত্রটি আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। বলেছিলেন, ‘‘বইটা দেবেন স্যার? একটু পড়ে দেখতাম।’’ হেস্টি বই দিতে রাজি হননি। কারণ কাঁচা বয়সে সেই বইয়ের মর্ম বুঝবে কী করে! শেষমেশ নাছোড় ছাত্রের কাছে হার মেনেছিলেন স্যার। বই হাতে পেয়ে মাত্র তিন দিনে সেটা গোগ্রাসে গিলে ফেলেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। তবে হেস্টিও ছিলেন ঝানু মাস্টারমশাই। ঠিক করেছিলেন ছাত্রকে পরখ করে দেখবেন যে সে আদৌ বইটার কিছু বুঝেছে কি না। শুরু হয়েছিল তাঁর মৌখিক পরীক্ষা। তাঁকে হতবাক করে তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্রজেন্দ্রনাথ সময় নিয়েছিলেন নামমাত্র।
এরপরে আরও একবার, তখন এমএ পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছিল। ব্রজেন্দ্রনাথ মেতে উঠেছিলেন অর্থশাস্ত্র, সংস্কৃত, আর ভূতত্ত্বের চর্চায়। তার মাঝেই এক ভদ্রলোক এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি দেখেছিলেন রাশি রাশি ম্যাপ আর চার্ট ঘরময় ছড়ানো। তার মাঝে বসে রয়েছেন ব্রজেন্দ্রনাথ। ভদ্রলোক অবাক চেয়ে দেখেছিলেন পেশাগত ভাবে দার্শনিক ব্রজেন্দ্রনাথ তখন দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-প্রকৃতি কেমন, তারই রহস্য সন্ধানে মগ্ন হয়ে মাথা খুঁড়ছেন!
ব্রজেন্দ্রনাথ শীল বহুবিদ্যায় বিশারদ ছিলেন – শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ধর্মতত্ব, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত … বহু বিষয়ে তিনি ছিলেন অসামান্য পন্ডিত। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিন্তাবিদ। তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচারক। বিজ্ঞানের দর্শন ও তুলনামূলক ধর্মতত্বে তাঁর মতো পান্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা কোনও ভারতীয় আগে কখনও করেননি। যুক্তিবাদী মনন নিয়ে করেছিলেন বৈজ্ঞানীক অনুসন্ধান। গণিতে তিনি অত্যন্ত পন্ডিত ছিলেন বলে তিনিই প্রথম ভারতবর্ষে তুলনামূলক সাহিত্য ও ধর্মদর্শন বিচার এবং দর্শন আলোচনায় গণিতের সূত্র প্রয়োগ করেছিলেন। প্রাচীন ও আধুনিক মিলিয়ে প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ১০টি ভাষায় তাঁর বুৎপত্তি ছিল। বহু বিষয়ের চর্চা করা ব্রজেন্দ্রনাথের পাণ্ডিত্যের বিস্তার নিয়ে ঊনিশ ও বিশ শতকের বাংলায় বহু গল্পকথা ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন লেখনীতে।
আবার ফিরে তাকানো যাক তাঁর শৈশবে। পাঠশালার পড়া শেষ করে ব্রজেন্দ্রনাথ ভর্তি হয়েছিলেন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশনে। সেখান থেকেই ১৮৭৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেছিলেন। তারপর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ওই স্কুলের কলেজ বিভাগে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ)। যথারীতি সেখান থেকে ১৮৮০ সালে প্রথম বিভাগে এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তারপর ওই কলেজেই গণিতে অনার্স নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে প্রথম বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নিজের কলেজেই অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। এমন বিচিত্র ঘটনা আমাদের দেশে আগে বা পরে আর কখনও ঘটেনি। এর পরের বছর কলেজের অধ্যক্ষ উইলিয়াম হেস্টির অনুরোধে তিনি দর্শন বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ. পরীক্ষায় বসেছিলেন এবং প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন। এই এম.এ. পরীক্ষা ঘিরে যে বিরল কাহিনী আছে, তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। পরীক্ষায় ছিল মোট তিনটি পেপার। প্রতি পেপারের পরীক্ষায় ৫টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হত। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম ছিল, তিনটি পেপারের কোনও একটিতে ২৫-এর কম পেলে তা এগ্রিগেটে যোগ হবে না। তবে পাস নম্বর না পেলেও কমপক্ষে ২৫ পেলে তা মোট নম্বরের সাথে যোগ হবে এবং বাকি দুটি পেপারের নম্বর মিলিয়ে মোট পাস নম্বর পেতে হবে। ব্রজেন্দ্রনাথ একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সারা বছর দর্শন তো পড়েননি, পড়েছিলেন জীববিদ্যা আর নৃবিদ্যা। হাতে সময় বাকি ছিল মাত্র একমাস। থার্ড ক্লাস পেলে তা হত লজ্জার ব্যাপার! ব্রজেন্দ্রনাথ ওই এক মাসই পড়েই পরীক্ষায় বসেছিলেন। প্রথম পেপারে ব্রজেন্দ্রনাথ দেখেছিলেন সব প্রশ্নের উত্তরই জানা। কিন্তু পুরো ৩ ঘন্টা ধরে ব্রজেন্দ্রনাথ মাত্র একটি প্রশ্নের উত্তরই লিখেছিলেন। ব্রজেন্দ্রনাথতো বটেই, বন্ধুরা সবাই ধরে নিয়েছিলেন নির্ঘাত ফেল! তাঁর বন্ধুরা ও শিক্ষকরা বললেন, ‘‘বাকিগুলো ভালো করে দাও।’’ ব্রজেন্দ্রনাথও মনে মনে ঠিক করেছিলেন, পরের পরীক্ষাগুলোতে নির্ধারিত সময়ে পাঁচ’টি প্রশ্নের উত্তরই দেবেন। কিন্তু অবাক কান্ড! ব্রজেন্দ্রনাথ প্রতিটি পেপারেই তিন ঘন্টা ধরে মাত্র একটি করে প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলেন। সুতরাং ফেল কে আটকায়! কিন্তু পরীক্ষকরা তাঁর উত্তরপত্র দেখে অবাক হয়েছিলেন! এ তো রীতিমতো থিসিস পেপার! এই খাতা দেখে মূল্যায়ন করার যোগ্যতা অধ্যাপকদেরই নেই! সেনেটে এ নিয়ে জরুরি সভা বসেছিল। কী করা যায়! সিদ্ধান্ত হয়েছিল, একটা প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা নম্বর পাবেন, বাকি অলিখিত প্রশ্নের জন্য তার শতাংশের হারে নম্বর ধরে দেওয়া হবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে এমন সিদ্ধান্ত সেই প্রথম ও শেষ। রেজাল্ট বেরতে দেখা গিয়েছিল ব্রজেন্দ্রনাথই একমাত্র ছাত্র যিনি ওই বছর দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছিলেন! ভাবা যায়!
এমন নজিরবিহীন সু-অভ্যেস ব্রজেন্দ্রনাথের বরাবরই ছিল। সে একেবারেই ছাত্রবেলা থেকে। বিএ পরীক্ষা। প্রথম দিন, তাঁর প্রিয় বিষয় দর্শনের পরীক্ষা। কিন্তু প্রশ্নপত্র পেয়েই মনটা কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মাত্র একটা প্রশ্ন লিখতেই পরীক্ষার পুরো সময় পার হয়ে গিয়েছিল! ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। ঠিক করেছিলেন আর পরীক্ষা দেবেন না। ব্রজেন্দ্রর দাদা অবশ্য সে-যাত্রা ঠেলেঠুলে ভাইকে পরীক্ষায় বসিয়েছিলেন। ফল বেরোতে দেখা গিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করছে ব্রজেন্দ্রনাথকে! শোনা যায়, ব্রজেন্দ্রনাথের সেই উত্তরপত্র দেখে পরীক্ষকেরা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ওই একটি উত্তরকেই মৌলিক গবেষণা হিসেবে গণ্য করা যায়।’’ এম.এ. পাস করার পরের বছর মাত্র ২০ বছরের ব্রজেন্দ্রনাথ ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে সিটি কলেজে যোগ দিয়েছিলেন। এই সময় ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, কিটস, বায়রনের সাহিত্যজগতে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ।
১৮৮১ সালে ব্রজেন্দ্রনাথ আসামনিবাসী জয়গোপাল রক্ষিতের জ্যেষ্ঠা কন্যা ইন্দুমতী দেবীর সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ইন্দুমতী ছিলেন রীতিমতো শিক্ষিতা। তাঁর টান ছিল ইংরেজ রোমান্টিক কবিদের লেখায়। স্বামীর সঙ্গে প্রায়ই চালাতেন কোলরিজ, কিটস, ওয়ার্ডসওয়ার্থ নিয়ে আলোচনা। এ সুখও ব্রজেন্দ্রনাথের কপালে সয় নি। মাত্র ছ’বছরের দাম্পত্য কাটিয়ে ইন্দুমতী মারা গিয়েছিলেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিন পুত্র ও এক কন্যাকে রেখে ইন্দুমতী দেবী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই ব্রজেন্দ্রনাথকে কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুশোকও ভোগ করতে হয়েছিল। ব্রজেন্দ্রনাথের অবস্থা তখন বেহাল বললেও কম বলা হয়। একে বয়স কম, তার উপরে দেশ-বিদেশ থেকে আলোচনাসভায় যোগ দেওয়ার ডাক আসছিল। কিন্তু অমন ক’টি শিশুকে ফেলে যাবেন কোথা! কিন্তু পিছু হটার লোক তিনি ছিলেন না। সব কিছু সামলে নিয়েছিলেন। একা হাতে বড় করেছিলেন ছেলেমেয়েদের। তাঁর বড় ছেলে বিনয়েন্দ্রনাথ কেমব্রিজ থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে মুম্বইয়ের এলফিনস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। মেজ ছেলে অমরেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর আবাস হয়েছিল লন্ডন। সেজ ছেলে অনিলও পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। সবার ছোট ছিলেন, মেয়ে সরযূবালা, তাঁর সঙ্গে চিত্তরঞ্জন দাসের ভাই বসন্তরঞ্জনের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন জামাই বসন্তরঞ্জনও। মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ! ঠিক করেছিলেন মেয়ের লেখালেখিতে উৎসাহ দেবেন। যদি তাতে খানিক ভাল থাকে সে। সরযূবালা নিয়মিত লিখতে শুরু করেছিলেন ‘নারায়ণ’ পত্রিকায়।
আর্থিকভাবে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যলাভের উদ্দেশ্যে ব্রজেন্দ্রনাথ ১৮৮৫ সালে নাগপুরের মরিস মেমোরিয়াল কলেজে যোগদান করেছিলেন। কিছুদিন পরে তিনি এই কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। এত কম বয়সে দেশে কোনও কলেজের অধ্যক্ষ হওয়া – এটাও ব্রজেন্দ্রনাথের একটা রেকর্ড। ১৮৮৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে বাংলায় ফিরে আসেন ব্রজেন্দ্রনাথ। ১৮৯৭ সালে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়নের অনুরোধে কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজে (বর্তমানে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ) অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেছিলেন। তিনিই ছিলেন ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম ভারতীয় অধ্যক্ষ। ব্রজেন্দ্রনাথ ভিক্টোরিয়া কলেজকে কেন্দ্র করে কোচবিহার রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্ম দিয়েছিলেন। ভিক্টোরিয়া কলেজে দীর্ঘ ১৫ বছর অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অবশ্য তাঁর এই বিদেশযাত্রার জন্য অর্থ জুগিয়েছিলেন কোচবিহারের মহারাজা।
বিলেতেও যে ব্রজেন্দ্রনাথের মান্যতা কতখানি ছিল, তা বোঝা যায় আর একটি ঘটনা থেকে। একবার সুইৎজারল্যান্ডে পক্ষী প্রদর্শনীর আন্তর্জাতিক আসর বসেছিল। একটি পাখির মূল বাসস্থান কোথায়, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ পড়েছিলেন মহা সমস্যায়। ব্রজেন্দ্রনাথও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। কতৃপক্ষের মধ্যে কেউ কেউ ব্রজেন্দ্রর পাণ্ডিত্যের কথা আগে শুনেছিলেন। তাই তাঁর কাছে গিয়েছিলেন জানতে, যদি কোনও হাল হয়! পাখিটাকে দেখে একটি অঞ্চলের কথা বলেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। বিশ্বাস হয়নি কর্তৃপক্ষের। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গিয়েছিল ব্রজেন্দ্রনাথ যা বলেছিলেন, ঠিক সেই জায়গাটিই ছিল পাখিটির আদি বাসস্থান।
বিদেশিদের বেকুব বানাতেও ছিল ব্রজেন্দ্রনাথের জুড়ি মেলা ভার। একবার জাহাজে চড়ে লন্ডন যাচ্ছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। জাহাজের ক্যাপ্টেনের ইচ্ছে হয়েছিল বাঙালি ভদ্রলোককে নিয়ে একটু মশকরা করা যাক। কথা প্রসঙ্গে ক্যাপ্টেন জেনে নিয়েছিলেন যে ব্রজেন্দ্রনাথের পড়াশোনার বিষয় দর্শন। সমুদ্রের দিকে আঙুল তুলে তিনি ব্রজেন্দ্রনাথকে জিজ্ঞেস করে বসেছিলেন, ‘‘ওই যে দূরের জাহাজ। আপনার দর্শন কি ওই জাহাজের গতি নির্ণয় করতে পারবেন?’’ প্রশ্নটি করে ক্যাপ্টেনের মুখে কেমন যেন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি খেলে গিয়েছিল। ব্রজেন্দ্রনাথ কিন্তু পাল্টা মৃদু হাসি দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নির্ণয় করে ফেলেছিলেন জাহাজের গতি। রীতিমতো বেকুব বনে ডকের উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যাপ্টেন।
অঙ্কে ব্রজেন্দ্রনাথের দক্ষতা ঠিক এমনই ছিল। ভালবাসাও। তাই বোধহয় রাশিবিজ্ঞান নিয়েও তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। আগ্রহটা এমনই যে, প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশকে পর্যন্ত এই বিষয়ের গবেষণার জন্য উৎসাহ দিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে বিজ্ঞান, বিশেষ করে অঙ্কের জন্য সাতখুন মাপ করতেও কসুর করতেন না তিনি। তেমনই একটি গল্পে আসা যাক। এটি পাওয়া যায় ব্রজেন্দ্রনাথের ছাত্র কুমুদবন্ধু চক্রবর্তীর লেখা থেকে। একবার বিএ পরীক্ষার টেস্টে এক ছাত্র ইংরেজিতে ভীষণ কম নম্বর পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অঙ্কের ফল হয়েছিল নজরকাড়া। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, ওই ছাত্রটিকে কিছুতেই বিএ পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না। ছাত্রের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। পরীক্ষকদের বলেছিলেন, ‘‘কিন্তু ও যে অঙ্কে বড় ভাল।’’ সঙ্গে এও জানিয়ে দিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ, তিনি ওই ছাত্রটিকে দায়িত্ব নিয়ে ইংরেজি শেখাবেন। ঋদ্ধ, প্রাজ্ঞ ব্রজেন্দ্রনাথের কথায় ভরসা করতেন সবাই, ফলে ইংরেজিতে কম পাওয়া ছাত্রটি রেহাই পেয়েছিলেন। ব্রজেন্দ্রনাথ কথামতো তাঁকে ইংরেজি পড়াতে শুরু করেছিলেন। যথাসময়ে পরীক্ষার ফল বেরলে দেখা গিয়েছিল, ভালমতোই উতরে গিয়েছে ছাত্রটি।
১৮৯৯ সালের ১৫ই অক্টোবর ব্রজেন্দ্রনাথ রোমে প্রাচ্যবিদ্যার ওপর এক আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় (Congress International Des Orientalists) অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখানে তিনি চারটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। প্রথম প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল “Comparative Studies in Vaishnavism and Christianity”। এই প্রবন্ধে তিনি ‘ইতিহাসের দর্শন’ ও ‘ঐতিহাসিক তুলনামূলক পদ্ধতি’ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছিলেন। তিনি বিশ্বজনীন সংস্কৃতির উপর মৌলিক কিছু ধারণার কথা বলেছিলেন যা পাশ্চাত্যের বিদ্দ্বজ্জনদের কাছে অজানা ছিল। ভারতীয় দর্শনের উপর ব্রজেন্দ্রনাথের এই অসামান্য পান্ডিত্যপূর্ণ ভাষনের পর ব্রজেন্দ্রনাথের খ্যাতি সারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯১১ সালে ব্রজেন্দ্রনাথ প্রথম বিশ্বজাতি কংগ্রেসে (The First Universal Race Congress) বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে লন্ডনে গিয়েছিলেন। তিনি “Meaning of Race, Tribe and Nation” শীর্ষক আলোচনাপত্রের উপর উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘Race Origin’। এই প্রবন্ধে তিনি জাতিতত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রাণিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি ও দর্শনের আলোকে মানবজাতির উৎপত্তি সম্পর্কে নতুন ধারণা তুলে ধরেছিলেন। ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক ও নীতিবিজ্ঞান বিষয়ে রাজা পঞ্চম জর্জ নামাঙ্কিত (বর্তমানে Brajendranath Seal Professor of Mental and Moral Science) একটি চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ১৯১৩ সালে সেই চেয়ারে প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথ। ১৯২০ পর্যন্ত তিনি সেই চেয়ার অলংকৃত করেছিলেন। ১৯১৭ সালে ভারতবর্ষে শিক্ষা-সংস্কারের উদ্দেশ্যে মাইকেল স্যাডলারের সভাপতিত্বে যে কমিশন (স্যাডলার কমিশন) গঠিত হয়েছিল ব্রজেন্দ্রনাথ ছিলেন তার অন্যতম সদস্য এবং ১৯১৯ সালে এই কমিশন যে পাহাড়প্রমাণ রিপোর্ট পেশ করেছিল তার অধিকাংশ অধ্যায়ই ছিল ব্রজেন্দ্রনাথের লেখা।
১৯২১ সালে ব্রজেন্দ্রনাথ মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। উপাচার্য থাকাকালীন ব্রজেন্দ্রনাথ মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসনিক ও শিক্ষার মানের দিক থেকে অনেক উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন। মহীশূররাজের শাসন সংস্কার পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও তিনি কিছুকাল সামলেছিলেন।
১৯১০ সালে ‘Mechanical, Physical and Chemical Theories of Ancient Hindus’ শীর্ষক থিসিস রচনা করে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ১৯২১ সালে তাঁকে ডি এসসি ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। তবে সবচেয়ে বড় সম্মান হিসেবে ব্রিটিশ সিরকার তাঁকে নাইটহুড (স্যার) খেতাব দিয়েছিল। এছাড়া মহীশূরে অসামান্য অবদানের জন্য মহীশূররাজ তাঁকে ১৯৩০ সালে ‘রাজতন্ত্রপ্রবীণ’ সম্মানে ভূষিত করেছিলেন।
তাঁর নানা বিষয়ে রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: গণিতের উপর মহাগ্রন্থ “A Memoir on the Co-efficient of Numbers: A Chapter on the Theory of Numbers” (1891); ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে “Neo-Romantic Movement in Bengali Literature” (1890-91); ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে “A Comparative Study of Christianity and Vaishnavism” (1899); সমালোচনা সাহিত্য বিষয়ক “New Essays in Criticism” (1903); প্রাচীন ভারতে রসায়ন চর্চা বিষয়ক “Introduction to Hindu Chemistry” (1911); প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে “Positive Sciences of the Ancient Hindus” (1915); নৃতত্ত্ব বিষয়ক “Race-Origin” (1911); ইংরেজিতে লেখা মহাকাব্য “The Quest Eternal” (1936), “The Gita: A synthetic Interpretation”, “The Equation of Digits: Being an Elementary Application of a Principle of Numerical Grouping to the Solution of the Numerical Equations” ইত্যাদি।
“Positive Sciences of the Ancient Hindus” গ্রন্থে তিনি বিজ্ঞান চর্চায় হিন্দুদের সাথে সাথে জৈন ও বৌদ্ধদের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। ১৮৯০-৯১ সালে The Calcutta Review পত্রিকায় প্রকাশিত হয় “Neo-Romantic Movement in Bengali Literature”। এই লেখার মধ্যে ব্রজেন্দ্রনাথের জ্ঞানের গভীরতা, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণী ক্ষমতা, বুদ্ধিমিত্তার দীপ্তি ও অসাধারণ বিচারশক্তির নমুনা দেখা যায়। তুলনামূলক সাহিত্যের এক অসামান্য ব্যাখ্যাতা হিসেবে তিনি এই লেখায় নিজেকে উপস্থাপিত করেন। ব্রজেন্দ্রনাথের লেখা “The Quest Eternal” হল মানব সভ্যতার কাল ও ঘটনাবলী উল্লেখ করে দার্শনিক মতবাদসমূহের এক কাব্যাকাব্য। এখানে উল্লেখ্য “The Quest Eternal” মহাকাব্যটি ব্রজেন্দ্রনাথ শেষ বয়সে ভগ্নস্বাস্থ্য হয়ে রোগশয্যায় শুয়ে ও প্রায় দৃষ্টিহীন অবস্থায় লিখেছিলেন। অনেকেই জানেন না, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘হিন্দু রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রথম দুটি অধ্যায় আচার্য শীলের লেখা।
ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন দর্শন ও বিজ্ঞান হল পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত বিষয়। আর তাই তিনি এই দুই বিষয়ে চর্চাও করেছিলেন বিস্তর। তিনি মনুষ্যেতর প্রাণী, শিশু ও অস্বাভাবিক মনস্তত্ব নিয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করেছিলেন। সেই সময়ের অত্যাধুনিক বিষয় পরীক্ষামূলক মনস্তত্ব নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি ভূতত্ব ও প্রত্নতত্বের সাহায্যে পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ে সচেষ্ট ছিলেন। বিবিধ বষয়ে তাঁর ছিল অবাধ বিচরণ। ‘ভারতীয় স্থপতি শিল্প’, ‘ওড়িশার মন্দিরগাত্রের চিত্র’, ‘শিক্ষাবিস্তার’ – এমনই নানা বিষয়ে তিনি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তাঁকে ভারতে রাশিবিজ্ঞানের জনকও বলা যেতে পারে। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ যাঁকে দেখে রাশিবিজ্ঞানে উৎসাহী হয়েছিলেন তিনি হলেন আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। রবীন্দ্রনাথ সহ সমকালীন অন্য বাঙালি সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকে প্রথম পাশ্চাত্যের সাথে পরিচিত করিয়েছিলেন যিনি তিনি আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার অনেক আগে ১৮৯১ সালেই ব্রজেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন। ব্রজেন্দ্রনাথের সাথে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল অতি প্রগাঢ়। তাঁর প্রতি রবীন্দ্রনাথের শ্রদ্ধাও ছিল অপরিসীম। ১৯২১ সালের ২৩শে ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে তিনি বিশ্বভারতীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন। সভাপতি বরণের সময় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – “… আমি আচার্য শীল মহাশয়কে সকলের সম্মতিক্রমে বরণ করেছি; তিনি সভাপতির আসন গ্রহণ করে কর্ম সম্পন্ন করুন, বিশ্বের প্রতিনিধি রূপে আমাদের হাত থেকে একে গ্রহণ করে বিশ্বের সম্মুখে স্থাপন করুন। তিনি এ বিষয়ে যেমন করে বুঝবেন তেমন আর কেউ পারবেন না। তিনি উদার দৃষ্টিতে জ্ঞানরাজ্যকে দেখেছেন। কেবল অসাধারণ পাণ্ডিত্য থাকলেই তা হতে পারে না, কারণ অনেক সময়ে পাণ্ডিত্যের দ্বারা ভেদবুদ্ধি ঘটে। কিন্তু তিনি আত্মিক দৃষ্টিতে জ্ঞানরাজ্যের ভিতরের ঐক্যকে গ্রহণ করেছেন। আজকের দিনে তাঁর চেয়ে বিশ্বভারতীকে গ্রহণ করবার যোগ্য আর কেউ নেই। আনন্দের সহিত তাঁর হাতে একে সমর্পণ করছি।” রবীন্দ্রনাথ আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকে বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্য হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।
আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথের সাথে স্বামী বিবেকানন্দেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিবেকানন্দ তখন নরেন্দ্রনাথ। জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশনে ব্রজেন্দ্রনাথের থেকে এক ক্লাস নিচে পড়তেন নরেন্দ্রনাথ। যদিও ব্রজেন্দ্রনাথের চেয়ে এক বছরের বড়ো ছিলেন নরেন্দ্রনাথ। তাঁরা এইসময় ব্রাহ্মসমাজের সভায় নিয়মিত হাজির হতেন। এই সময় তাঁরা দু’জনে একসাথে জন স্টুয়ার্ট মিল, অগাস্তে কোমতে, হারবার্ট স্পেনসার, হেগেল প্রমুখের বিশ্বাস, অগ্রগতি ও আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির জটিলতাগুলি উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীকালে ভগিনি নিবেদিতার অনুরোধে ব্রজেন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে ছাত্রজীবনের একটি স্মৃতিকথা রচনা করেছিলেন। এটি ‘প্রবুদ্ধ ভারত’ পত্রিকায় ১৯০৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।
ব্যক্তিজীবনের ‘বিচ্ছেদ-শোকে’র খানিকটা বোধহয় ব্রজেন্দ্রনাথ ভুলে থাকতে পেরেছিলেন তাঁর ঈর্ষণীয় বন্ধু-সান্নিধ্যের কারণে। বয়সে ছোট বা বড় যেই-ই হোক না কেন, ব্রজেন্দ্র-সান্নিধ্য লাভে কাউকেই তেমন বেগ পেতে হত না। ব্রজেন্দ্রনাথের বন্ধুর তালিকায় সব থেকে বড় যে নামটি, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে সম্পর্ক এতই নিবিড় যে, রবীন্দ্রনাথের লেখাপত্র নিয়েও মন্তব্য করতেন ব্রজেন্দ্রনাথ। একবার তো কবিকে বলেই ফেলেছিলেন, ‘গীতাঞ্জলি’ অপেক্ষাও রবীন্দ্রনাথ অনেক ভাল লেখা লিখেছেন। শুধু তাই নয়, ‘গীতাঞ্জলি’ প্রসঙ্গে যে-সাহেবের মতামত খানিক বেশিই চর্চিত, সেই ডব্লিউ বি ইয়েটসকেও রেয়াত করেননি ব্রজেন্দ্রনাথ। তাঁর মতে, ইয়েটস গীতাঞ্জলি বুঝতে ‘‘কিয়দংশে ভুল করিয়াছেন।’’ রবীন্দ্র-ব্রজেন্দ্র সখ্যের একটি চমৎকার ঘটনার কথা লিখেছিলেন নির্মলকুমারী মহালানবিশ। ব্রজেন্দ্রনাথের বেঙ্গালুরুর বাড়ি ‘ব্যালাব্রুয়ি’তে একবার রবীন্দ্রনাথ দিন কয়েকের জন্য উঠেছিলেন। সেখানে বসেই রবীন্দ্রনাথ শেষ করেছিলেন তাঁর বুড়ো বয়সের একটি লেখা। ব্রজেন্দ্রনাথ সেটা শুনতে চাইলেন। পড়া শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথ। বৃদ্ধ ব্রজেন্দ্রনাথ বিস্মিত! দাড়িতে হাত বুলিয়ে মাঝে মাঝে শুধু বলে চলেছিলেন ‘বাঃ চমৎকার’ ‘ব্রিলিয়ান্ট’ ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের পড়া শেষে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘এখনও এই রকম লেখা বেরোচ্ছে? এই বয়সেও?’’ লেখাটির নাম ‘শেষের কবিতা’।
তবে শুধু রবীন্দ্রনাথই নয়। আড্ডাপ্রিয় ব্রজেন্দ্রনাথের বৈঠকখানায় নিয়মিত দেখা মিলত জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রমেশচন্দ্র মজুমদার, চিকিৎসক নীলরতন সরকারের মতো সেকালের নক্ষত্রদের। সেখানেও সেই ব্রজেন্দ্র-পাণ্ডিত্যের কথা ছড়িয়ে রয়েছে। প্রফুল্লচন্দ্র তখন তাঁর বিখ্যাত ‘হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’ বই লেখায় ব্যস্ত। কিন্তু একটা বিষয়ে তাঁর তেমন অধিকার নেই বলেই তিনি মনে করেছিলেন। বিষয়টা ছিল ‘প্রাচীন ভারতের পরমাণুতত্ত্ব’। কী করবেন? ছুটেছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথের কাছেই। প্রবীণ দার্শনিকের অধ্যায়টি লিখতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হয়নি।
বন্ধুতার টান ব্রজেন্দ্রনাথকে চিরকাল টেনেছিল। ব্রজেন্দ্রনাথ তখন কোচবিহারের কলেজে ছিলেন। হঠাৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তাঁর বন্ধু প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন যে তাঁকে রাজা পঞ্চম জর্জের সম্মানে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধ্যাপক পদে যোগ দিতে হবে। সেই অনুরোধ ঠেলতে পারেননি ব্রজেন্দ্রনাথ। কারণ তাঁর বন্ধুটি যে ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়!
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অবশ্য নাড়ির যোগ ছিল ব্রজেন্দ্রনাথের। সে কেমন? একবারের কথা বলা যাক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন তৈরি হয়েছিল। নেতৃত্বে ছিলেন লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাইকেল স্যাডলার। স্যাডলার পরামর্শের জন্য গিয়েছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথের কাছেই। বাকিটা ইতিহাস। সেই ভিনদেশি পণ্ডিত ব্রজেন্দ্রনাথের শিক্ষা ও প্রশাসন সম্পর্কে দক্ষতায় বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে ব্রজেন্দ্রনাথ আজীবন ছিলেন ব্রাহ্ম। তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গেও একজন মনীষীর নাম জড়িয়ে রয়েছে। ছাত্রজীবনে তাঁর এক বন্ধু ছিলেন। ক্লাসে হেস্টি সাহেব একবার ধর্মের কথা বলতে বলতেই শ্রীরামকৃষ্ণের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। ব্রজেন্দ্রনাথ ও তাঁর সেই বন্ধুটি ঠিক করেছিলেন রামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করবেন। গিয়েছিলেনও। এর পর থেকেই তাঁর বন্ধুটি বাঁধা পড়ে গিয়েছিলেন পরমহংসের কাছে। বন্ধুটির নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। যিনি পরে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হয়েছিলেন। বিবেকানন্দের সঙ্গে ব্রাহ্ম ব্রজেন্দ্রনাথের হৃদ্যতায় কোনও দিন ভাঁটা পড়েনি। তাই বোধহয় রামকৃষ্ণের জন্মশতবর্ষে আয়োজিত সর্বধর্ম সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণটিও ব্রজেন্দ্রনাথই দিয়েছিলেন। আসলে ধর্মতত্ত্বের চর্চা ছিল ব্রজেন্দ্রনাথের বহুকালের প্রিয় বিষয়। এখানেও বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর একটা মিল রয়েছে। ১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে ‘বিশ্বধর্ম সম্মেলন’-এ স্মরণীয় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এর বছর ছয়েক বাদে রোমে বসেছিল ‘আন্তর্জাতিক প্রাচবিদ্যা সম্মেলন’। ব্রজেন্দ্রনাথ তখন কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। মহারাজার কাছে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন সম্মেলনের আয়োজকেরা। ব্রজেন্দ্রনাথ থাকতে আর কেইই বা যাবেন! ব্রজেন্দ্রনাথের বক্তব্যের বিষয় ছিল খ্রিস্ট ও বৈষ্ণব ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা। তাঁর বক্তৃতা শুনে নড়েচড়ে বসেছিল ইউরোপের বিদগ্ধ মহল। এর পরেও বেশ কয়েকটি সভা-সমিতিতে যোগ দিতে ব্রজেন্দ্রনাথ ইউরোপ ও লন্ডন সফর করেছিলেন।
দশটি ভাষায় পারদর্শী ব্রজেন্দ্রনাথের কর্মজীবনও ছিল বৈচিত্রে ভরা। পড়িয়েছিলেন সিটি কলেজ, বহরমপুর কলেজ, ভিক্টোরিয়া কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন জায়গায়। বহরমপুর কলেজের অধ্যক্ষ পদে ব্রজেন্দ্রনাথ যখন যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মোটে চব্বিশ বছর। কিন্তু শুধু বাংলাতেই মন টেকেনি ব্রজেন্দ্রনাথের। নাগপুরের মরিস কলেজে অধ্যক্ষ এবং মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও তাঁর খ্যাতি গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। ন’বছর মহীশূরে উপাচার্য থাকাকালীন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নজর দিয়েছিলেন সংখ্যালঘুদের উন্নয়নেও।
৩রা ডিসেম্বর ১৯৩৮ সালে ব্রজেন্দ্রনাথ যখন চিরবিদায় নেন, তাঁর বয়স হয়েছিল চুয়াত্তর বছর। ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড থম্পসনের বন্ধু প্যাট্রিক সেডেড বলেছেন, ‘‘Seal was the greatest brain functioning in this planet’’। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, বাঙালির চির-আক্ষেপের বিষয় হল, এই মনীষীর লেখাপত্রের রচনাবলি বা সংকলন আজ অবধি প্রকাশিত হয়নি। এক বার প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশ চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হন। তার পর থেকে এমন বর্ণময় জীবন, তাঁর রচনা উদ্ধারের আর কোনও চেষ্টাই হয়নি!
আজ তাঁর প্রতি বাঙালির অবজ্ঞা দেখে একটি বাক্যই মনে আসে, ‘‘হায় রে, অবোধ বাঙালি!’’
(তথ্যসূত্র:
১- ‘আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল’, হরিপদ মণ্ডল।
২-‘আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল: এ লাইফ স্কেচ’, বিভূতিভূষণ সরকার।
৩- কারুভাষ, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল সংখ্যা।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত