বিজয় মালিয়া নিয়ে বয়ান দিয়েও সামালাতে পারলেন না অরুণ জেটলি। আত্মপক্ষ সমর্থনে জেটলির দেওয়া বয়ান উড়িয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় তোপ দাগলেন রাহুল গান্ধী। সাফ বলে দিলেন, ‘মিথ্যে বলছেন অরুণ জেটলি। বিজয় মালিয়া দেশ ছাড়ার আগে সংসদে অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সাক্ষী রয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়া। অরুণ জেটলি এখন দেশবাসীকে জানান তাঁর সঙ্গে কেন একজন অপরাধীর যোগাযোগ ছিলো। এরকম একজনকে দেশ থেকে পালাতে কেন জেটলি সাহায্য করলেন তাও জানাতে হবে’। তাঁর প্রশ্ন, “জেটলির কথা যদি সত্যিও হয়, তা হলেও তিনি একজন অভিযুক্তের দেশ ছেড়ে পালানোর কথা শুনে চুপ করে বসে রইলেন কীভাবে? সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ, সিবিআই বা ইডিকে সে কথা জানাননি কেন?’
একইসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, এসবিআই-সহ একাধিক ব্যাঙ্কের থেকে নেওয়া ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ শোধ না করা মালিয়া দেশে ছাড়ার আগে তার বিরুদ্ধে জারি ‘লুক আউট’ নোটিস ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে’ হালকা করে দিয়েছে মোদী সরকার। ‘লুক আউট’ নোটিস থাকা সত্বেও মালিয়াকে কেন দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হল সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল হাজির করেন মালিয়া-জেটলি বৈঠকের স্বঘোষিত সাক্ষী কংগ্রেস সাংসদ পিএল পুনিয়াকে।পুনিয়া বলেন, ‘২০১৬ সালের মার্চে সংসদের সেন্ট্রাল হলে মালিয়া এবং সঙ্গে জেটলি দুজনে কথা বলেছিলেন। তারপর তাঁরা অন্তরঙ্গ ভাবে বসে বৈঠক করেছিলেন’।
তাঁর দাবি, মিনিট পনেরো-কুড়ি বৈঠক হয়েছিল। পুনিয়ার দাবি, “যেদিন সেন্ট্রাল হলে জেটলি ও মালিয়াকে বৈঠক করতে দেখলাম, তার ঠিক দু’দিন পর টিভিতে মালিয়ার চম্পট দেওয়ার খবর দেখে চমকে উঠেছিলাম”। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই তাঁর বক্তব্য প্রমাণ হবে বলেও দাবি করেছেন পুনিয়া।
লন্ডনে সাংবাদিকদের মালিয়া জানিয়েছেন, দেশ ছাড়ার আগে তিনি অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেছেন। কথা বলেছেন। ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণ শোধ করা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। মালিয়ার বক্তব্য সামনে আসার পরেই গতকাল সন্ধেয় বিবৃতি দিয়েছেন জেটলি। আশ্চর্যের বিষয় হল, মালিয়ার দাবি এবং জেটলির বক্তব্যের মধ্যে বিরাট কোনও ফারাক নেই। শুধু ‘বৈঠক’ শব্দে আপত্তি জেটলির। মালিয়ার সঙ্গে দেখা হওয়া, কথা বলা এবং তাঁর সামনে মালিয়ার ব্যাঙ্কঋণ নিয়ে সমাধানে প্রস্তাব দেওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন জেটলি। তবে তাঁর দাবি, তিনি কোনও মন্তব্য না–করে মালিয়াকে ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। কংগ্রেস তাঁর এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়। জেটলির বিরুদ্ধে সংসদে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিস আনবে কংগ্রেস।
এই প্রসঙ্গেই রাহুল গান্ধী এদিন কড়া ভাষায় মোদী-জেটলির সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘জেটলি–মালিয়া বৈঠকের প্রমাণ আছে। মালিয়াকে পালাতে সাহায্য করতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বদলে ইনফরমেশন নোটিস করা হয়েছিল। কে করেছিলেন? যিনি সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি? কার নির্দেশে জেটলি এমনটা করেছেন? এখন জেটলি হয় জবাব দিন, নচেৎ পদত্যাগ করুন’। রাহুলের তোপ, ‘অরুণ জেটলি তাঁর সব কথা ব্লগে লেখেন। তা হলে এই বৈঠকের বিষয়টি লিখলেন না কেন? স্পষ্টতই মোদি সরকার ও মালিয়ার মধ্যে অশুভ আঁতাত। কোনও চুক্তির ভিত্তিতে মালিয়াকে পালাবার পথ করে দেওয়া হয়েছিল। কী সেই চুক্তি, কার নির্দেশে মালিয়াকে দেশ ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল সবটা খুলে বলুন জেটলি। অর্থমন্ত্রীর এখন পদত্যাগ করা উচিত’।