লকডাউনের মধ্যে বন্ধ দেশের সমস্ত পরিবহণ ব্যবস্থা। তাই পায়ে হেঁটেই পথচলা শুরু করেছিল ১২ বছরের কিশোরী। লকডাউনের মধ্যে যেভাবেই হোক বাড়ি পৌঁছতে হবে। সে জানে, পরিবারের হাতে সে টাকা না তুলে দিতে পারলে, সকলকে অভুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু ভাগ্যের কী করুণ পরিণতি। টানা তিনদিন হাঁটার পর তীরে এসে ডুবল তরী। বাড়ি ফেরা আর হল না। গ্রামে পৌঁছনোর খানিক আগেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল কিশোরী।
ছত্তিশগড়ের বীজাপুর জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা জামলো মড়কম। তেলেঙ্গানার এক গ্রামে লঙ্কা খেতের শ্রমিক। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকায় পড়ে যায় সেও। বাড়ি ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তার সামনে। কিন্তু বাড়িতে যে ফিরতেই হবে। তাই জামলো ও তার সঙ্গীরা ঠিক করে, হেঁটেই ছত্তিশগড় পৌঁছবে। সেই মতো ১১ জন মিলে গত ১৫ এপ্রিল হাঁটা শুরু করে। পেরতে হবে ১৫০ কিলোমিটার পথ। পাছে পুলিশে আটকে দেয়, তাই জঙ্গলের রাস্তা বেছে নেয় তাঁরা। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ভুলে দীর্ঘ তিনদিন হেঁটে গন্তব্যের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে যায় জামলো। কিন্তু শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। অসহ্য পেট যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সেখানেই সব শেষ। বাড়ির ফেরার ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি কিশোরীর। পরে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি নিয়ে আসা হয় তাঁর মৃতদেহ।
চিকিৎসকরা জানান, ডিহাইড্রেশনের কারণেই মারা গিয়েছে কিশোরী। করোনা পরীক্ষাও করা হয় তাঁর। যদিও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। জেলা মেডিক্যাল আধিকারিক বিআর পুজারী বলেন, ‘শরীরে জলের অভাবে ভারসাম্যতা হারিয়েছিল।’ জামলোর সঙ্গীরাও জানায়, ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করছিল না সে। মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কিশোরীর বাবা অন্ডরাম মড়কম। জানান, মাস দুয়েক আগে খেতে কাজের জন্য তেলেঙ্গানা যায় জামলো। কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হল না।