দেশজোড়া লকডাউন সত্বেও ভারতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে লাইভ ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আগামী রবিবার রাত ৯টায় ৯ মিনিট আপনারা ঘরের সব লাইট বন্ধ করে আপনারা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালান। এতে দেশে মহাশক্তির জাগরণ হবে। মোদীর এই নিদানেই সিঁদূরে মেঘ দেখছে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। কারণ দেশ জুড়ে ৯ মিনিটের জন্য বাড়ির আলো নেভানো হলে আচমকা জোরাল ধাক্কা খেতে পারে পাওয়ার গ্রিড। আবার ৯টা বেজে ৯মিনিটের পরেই দেশ জুড়ে তৈরি হবে বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা। এই টানাপড়েনে ঘটতে পারে বড়সড় বিপর্যয়। বিপত্তি এড়াতে রবিবার রাত ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ধাপে ধাপে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরপ্রদেশের বিদ্যুৎ দফতর।
রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের মতে, এমন কৌশলে প্রধানমন্ত্রীর আর্জিও রক্ষা হবে। আবার পাওয়ার গ্রিডেও বাড়তি চাপ পড়বে না। ওই বিশেষ ৯ মিনিট দেশের প্রতিটি বিদ্যুৎ সংস্থাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ জারি করেছে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডও। স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এসএলডিসি) কর্তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো, রবিবার রাত ৯টা থেকে ৯টা বেজে ৯ মিনিট পর্যন্ত দেশ জুড়ে বাড়ির আলো নেভানো হলে উত্তরপ্রদেশের পাওয়ার গ্রিডে বিপুল চাপ পড়বে। অন্তত ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাড়তি হবে। ওই ‘বিপুল পরিমাণ’ বিদ্যুৎ জোরাল ঘা দিতে পারে পাওয়ার গ্রিডে। সেই দুর্ঘটনা ঘটলে রাজ্য জুড়ে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। করোনা সঙ্কটের মধ্যে এই বিপত্তি সামলানোই এখন চ্যালেঞ্জ বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের কাছে।
এ নিয়ে দফতরের কর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছেন এসএলডিসি-র ডিরেক্টর রাম স্বরথ। তাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রবিবার রাত ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে ধাপে ধাপে যেন লোডশেডিং করা হয়। তাতে সামলানো যাবে বিপর্যয়। আবার শুক্রবার পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (পিজিসিআইএল)-এর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী আরকে সিংহ। এর পর রবিবার ৯টা থেকে ৯টা বেজে ৯মিনিট পর্যন্ত দেশের সমস্ত বিদ্যুৎ সংস্থাকেই বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলেছে পিজিসিআইএল। বলা হয়েছে, ৫ এপ্রিল ওই নির্দিষ্ট সময়ে কোনও রকম সাহায্য প্রয়োজন হলে দ্রুত ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সেন্টার-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। পরিষেবা মসৃণ ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে স্টেশন ইন চার্জ ও আধিকারিকদের নিজেদের অফিসের কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থাকতে হবে। স্পেশ্যাল ডিউটিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের বিস্তারিত বিবরণ ও মোবাইল নম্বর এনটিএএমসি-কে ৪ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে হবে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দেন, করোনা সঙ্কটে যে অন্ধকার তৈরি হয়েছে, তা শেষ করতে আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীকে ‘মহাশক্তি’ জাগ্রত করতে হবে। এ নিয়ে মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎমন্ত্রী নিতিন রাউত বলেন, ‘এমনিতেই লকডাউনের জন্য কারখানা বন্ধ। ফলে ২৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে চাহিদা নেমে ১৩ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। তার ওপর একসঙ্গে সব আলো নিভিয়ে দিলে ব্ল্যাকআউট হতে পারে। যা ঠিক করতে ১২-১৬ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। যেখানে করোনার মতো অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজনীয়।’ মোদীর সিদ্ধান্ত নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘রবিবার রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা হুট করে কমে রাত ৯টা ৯ মিনিটের পর আবার আচমকা বাড়বে। এভাবে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের গ্রিডে বিপর্যয় ঘটাতে পারেন…তিনি এটা চিন্তাই করেননি!’