দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেই ফের বাংলাকে বঞ্চিত করার কাজ চালু হয়ে গিয়েছিল পুরোদমে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই আদালতের দরজায় থমকে গেল মোদী সরকারের বঞ্চনার এক্সপ্রেস। কলকাতা বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে কীটনাশক আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। কলকাতা হাইকোর্টে সেই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হলে শুনানির পর বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ওই পদক্ষেপকে ‘বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি’র সঙ্গে তুলনা করে সম্পর্কিত সরকারি নির্দেশিকা ও আইনি সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, কলকাতা বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে আগের মতোই কীটনাশক আমদানি করা যাবে বলে সরকারি গেজেট ছাপিয়ে প্রকাশ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। সেখানে ১৯৭১ সালের ‘ইনসেক্টিসাইডস রুল’ সংশোধন করা হয়। ভারতের যেসব বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে কীটনাশক আমদানি করা যায়, তার তালিকা থেকে কলকাতাকে ওই সংশোধনী মারফত বাদ দেওয়া হয়। এর বৈধতা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাগ্রো কেম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্যরা। এই সরকারি পদক্ষেপকে ওই আইন ও সংবিধান অনুযায়ী বেআইনি বলে দাবি করে তারা। এই পদক্ষেপের ফলে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কীটনাশক আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন বলে দাবি করা হয়।
বলা হয়, এখানে অন্তত ৪০টি কীটনাশক উৎপাদক রয়েছে। অন্তত আটটি রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত। এখানকার কৃষকদের অতিরিক্ত দামে কীটনাশক কিনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমদানিকারকরাও। দেশের অন্য জায়গা থেকে তা আনলে প্রতি কিলোগ্রামে অন্তত ১০ টাকা খরচ বাড়বে। প্রতি মাসে কলকাতা বন্দর দিয়ে অন্তত ৪০-৫০টি কন্টেনার এবং কলকাতা বিমানবন্দরে কম করে ৭-৮টি চালান আসে বলে জানানো হয়। কেন্দ্র জবাবে সাফাই গায়, কলকাতা-সহ কয়েকটি বন্দর দিয়ে বেআইনিভাবে কীটনাশক আমদানির অভিযোগ ছিল। যা মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক। তাছাড়া এটি নীতিগত সিদ্ধান্ত।
তবে এই প্রেক্ষাপটে আদালত রায়ে বলেছে, বেআইনি কীটনাশক আমদানির একটি উদাহরণও আদালতে পেশ হয়নি। যেসব জায়গা তালিকায় রয়েছে, সেখান দিয়ে বেআইনি আমদানি হয়নি, এমন তথ্যও নেই। বেআইনি আমদানি রোখার জন্য কাস্টমস আইন ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে অন্যান্য আইন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, যে বা যাঁরা এই পণ্য আমদানি করতে চান, তাঁদের ১৯৬৮ সালের আইন অনুযায়ী গঠিত রেজিস্ট্রেশন কমিটির কাছ থেকে নিজেদের নথিভুক্ত করতে হয়। তৃতীয়ত, নীতিগত নয়, এটি আদতে আমলাতান্ত্রিক, বড়জোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।
রায়ে বলা হয়েছে, ওই আইন অনুযায়ী আছে সেন্ট্রাল ইনসেক্টিসাইডস বোর্ড। তা সরকারকে টেকনিক্যাল বিষয়ে পরামর্শ দেয়। এই নির্দেশ দেওয়ার আগে বা ছয় মাসের মধ্যে বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেই সরকারের এমন পদক্ষেপ করার কথা। এক্ষেত্রে তা হয়েছে কিনা, সেটা জানা যাচ্ছে না। আবার পণ্য আমদানির লাইসেন্স সরকারই দেয়। নবীকরণ করে। ফলে বেআইনি আমদানি নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রের ওই পদক্ষেপের জেরে সমগ্র পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিপুল কর ও খরচ বহন করে দেশের অন্য জায়গা থেকে কীটনাশক আনতে হবে। যা সরাসরি আঘাত করবে ক্ষুদ্র কৃষকদের। ফলে তাদের পাশাপাশি এই সমগ্র এলাকার অর্থনীতিতে বিপুল প্রভাব পড়বে।