প্রতিবেদন : ভরপুর উত্তেজনা। রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত জয়ের স্বাদ। রবিবারের ভারত মেতে উঠল অকাল-দিওয়ালিতে। ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি(Champions Trophy)জিতল টিম ইন্ডিয়া। মোক্ষম ম্যাচে জ্বলে উঠলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পাশাপাশি, ব্যাট হাতে শ্রেয়স-রাহুল-অক্ষর এবং বল হাতে বরুণ-কুলদীপের পারফরম্যান্স গড়ে দিল ভারতের বিজয়-ইমারত। এই নিয়ে তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেতাব এল টিম ইন্ডিয়ার ট্রফি ক্যাবিনেটে।
Read More: ফের বঞ্চনার শিকার বাংলা – গ্রামোন্নয়নে ৩৪৮৩ কোটির বিশ্বব্যাঙ্ক ঋণ আটকে দিল কেন্দ্র
টস-ভাগ্য এদিনও সঙ্গ দেয়নি রোহিতের। রবিবার টসে জিতে প্রত্যাশিতভাবেই ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। যেহেতু দ্বিতীয়ার্ধে দুবাইয়ের পিচ মন্থর হয়ে পড়ে, সেজন্য বড় রান তুলে ভারতকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। শুরুটাও দারুণ করেছিল নিউ জিল্যান্ড। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ভারতীয় সমর্থকদের মুখে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন কিউয়ি ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র। জমে গিয়েছিলেন আরেক ওপেনার ইয়ংও। দুজনের জুটিতে ওঠে ৫৭ রান। সেই জুটি ভাঙেন বরুণ চক্রবর্তী। আউট করেন ইয়ংকে (১৫)। তার কিছুক্ষণ পরেই নিউ জিল্যান্ডকে জোড়া ধাক্কা দেন কুলদীপ যাদব। তুলে নেন রাচিন (৩৭) ও উইলিয়ামসনের (১১) উইকেট।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1898751991062331781?s=19
দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর ফলে স্বাভাবিকভাবেই রানের গতি কমতে থাকে নিউ জিল্যান্ডের। ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ছিলেন মিচেল ও ল্যাথাম। আসছিল না বাউন্ডারি। সেই চাপেই জাদেজার বল সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ল্যাথাম (১৪)। এরপর ৫৭ রান যোগ হয় মিচেল-ফিলিপসের জুটিতে। ফিলিপসকে (৩৪) বোল্ড করেন বরুণ। এরপর শামির বলে আউট হন মিচেল (৬৩)। ইনিংসের শেষ লগ্নে অলরাউন্ডার মাইকেল ব্রেসওয়েলের ঝোড়ো অর্ধশতরান (৫৩*) কিউয়িদের ২৫০ রানের গণ্ডি পার করে দেয়। ৫০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান তোলে নিউ জিল্যান্ড। বরুণ দুটি, কুলদীপ দুটি, শামি ও জাদেজা একটি করে উইকেট নেন।
দুবাইয়ের পিচে ২৫০-২৬০ যে খুব একটা সহজ লক্ষ্য নয়, সে ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। তবুও চাপের কণামাত্র দেখা গেল রোহিত শর্মার ব্যাটিংয়ে। ফাইনালের মঞ্চেও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি বল উড়িয়ে দিচ্ছিলেন বাউন্ডারির বাইরে। মাত্র ৪১ বলে এল অর্ধশতরান। উল্টোদিকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে রোহিতকে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছিলেন গিল। দেখতে দেখতেই ১০০ পেরোল পার্টনারশিপ। ভারতীয় সমর্থকরা যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন, ঠিক তখনই স্যান্টনারের বলে এক অতিমানবিক ক্যাচে গিলকে (৩১) ফেরালেন গ্লেন ফিলিপস। দুঃসাধ্য ক্যাচ অনায়াসে তালুবন্দি করে নেওয়া একরকম অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি।
সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো ইনিংস উপহার দিলেও ফাইনালে নিষ্প্রভ রইল বিরাট কোহলির ব্যাট। গিল ফেরার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্রেসওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হলেন তিনি (১)। এর কিছুক্ষণ পরেই রাচিনের বলে স্টাম্পড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন রোহিত (৭৬)। গ্যালারিতে ততক্ষণে নেমে এসেছে নীরবতা। কমছে রানের গতি। বাড়ছে আস্কিং রেট। উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট ভারতীয় সমর্থকদের মুখে। তবে ঘাবড়ে যাননি শ্রেয়স ও অক্ষর। ৬১ রানের মহামূল্যবান পার্টনারশিপ এল তাঁদের ব্যাট থেকে। অর্ধশতরান থেকে দুকদম দূরে থামলেন শ্রেয়স। আউট হলেন স্যান্টনারের বলে।
এর খানিকক্ষণ পর অক্ষর আউট হলেও সেভাবে আর ভারতকে চাপে ফেলতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও বরফ-ঠাণ্ডা মাথায় অবতীর্ণ হলেন ‘ফিনিশার’ রাহুল। ৩৪ রানে অপরাজিত রইলেন তিনি। আর জয়সূচক রান এল রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে। মাহেন্দ্রক্ষণ স্মরণীয় হয়ে রইল স্টাম্প হাতে রোহিত-বিরাটের ‘ডান্ডিয়া’ নাচে। ২০০২, ২০১৩-এর পর তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতল ভারত। ম্যাচের সেরা হিসেবে নির্বাচিত রোহিত শর্মা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে রাচিন রবীন্দ্রকে।