রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই বাংলার পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতোই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে হোম ট্যুরিজমের উপর। সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। সেই কারণে সব সময় পর্যটনে জোর দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে হোম ট্যুরিজমে। বাংলার ট্যুরিজম শিল্প নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। এদিনের আলোচনায় এই মডেল নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বাংলার মানুষ ট্যুরিজমের উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। সেই কারণে আমাদের সরকার এই সেক্টরটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।” এপ্রসঙ্গে তিনি গঙ্গাসাগর মেলার উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় করেন গঙ্গাসাগরে। এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলোকে ট্যুরিজমের একটি নতুন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে হোম ট্যুরিজম মডেলে। গ্রামের বাড়িগুলিতে তৈরি হচ্ছে হোম স্টে। এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। পর্যটন শিল্পের প্রসারও ঘটছে। ফলে ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৃদ্ধিও ঘটবে। রাজ্যের আর্থিক স্বার্থ সুরক্ষিত হবে এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে বলে আশাবাদী তিনি।
উল্লেখ্য, ইউনেস্কোর তরফে আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্যের তকমা পেয়েছে বাংলা। যা ধরে রাখতে সরকার সবসময় তৎপর বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীয়। এদিন বিধানসভায় তিনি জানান, বাংলা এখন শুধুমাত্র দেশ নয়, গোটা বিশ্বের প্রথম সারির পর্যটন গন্তব্য। রাজ্যের পর্যটনের সার্বিক বিকাশে ভবিষ্যতের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও তিনি আজ বিধানসভায় তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পুরীর আদলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই মন্দির উদ্বোধন হবে। সহজে গঙ্গাসাগর পৌঁছানোর জন্য মুড়ি গঙ্গার ওপর সেতু নির্মাণের কাজও তৎপরতার সঙ্গে করা হবে বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, সেতু তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ওই সেতু তৈরি হলে গঙ্গাসাগরের মেলা কুম্ভ মেলার সমকক্ষ হয়ে উঠবে। জগন্নাথ মন্দিরে মার্বেলের জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের মূর্তি যেমন থাকবে, তেমনই পুরীর মন্দিরের আদলে নিমকাঠের ছোট্ট প্রতিমাও রাখা হবে পুজোর জন্য ৷ এর পাশাপাশি, জগন্নাথ মন্দিরের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠনের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার অধীনে মন্দিরের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। মন্দিরের সঙ্গেই ভোগ-ঘর তৈরি করা হয়েছে৷ যেখানে রোজ বিপুল পরিমাণে ভোগ রান্না হবে। ধর্মীয় পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাকে তুলে আনা অন্যতম লক্ষ্য রাজ্য সরকারের। যেখানে সবার আগে পুণ্যার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিকে মাথায় রাখা হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য দক্ষিণেশ্বরে তৈরি হওয়া স্কাই ওয়াকের কথা উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি একান্ন সতিপীঠের মধ্যে অন্যতম কালীঘাট মন্দিরের স্কাই ওয়াকের কাজও প্রায় শেষ বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।