INTTUC ২০১৫, সেপ্টেম্বর। ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশ। মুহাম্মদ আখলাখ নামের এক ৫২ বছরের ব্যক্তিকে গোমাংস ভক্ষণকারী সন্দেহে পিটিয়ে খুন করেছিল হিন্দুধর্মের ধ্বজাধারীরা। ঘটনার পর তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে যুক্তিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়ে একের পর এক নিজেদের জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকরা। এরপর আসা যাক ২০২৩, মার্চ-এর কথায়। ঘটনাস্থল বিহার। ব্যাগে গোমাংস রয়েছে, এমন সন্দেহে নাসিব কুরেশি নামের এক বৃদ্ধকে গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল গ্রামবাসীরা। আর এই নৃশংস ধারাবাহিতায় নতুন সংযোজন অতিসম্প্রতি ‘ডবল ইঞ্জিন’ হরিয়ানায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক সাবির মল্লিকের মৃত্যু। গোমাংস ভক্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে গো-রক্ষা বাহিনীর মাতব্বররা। অর্থাৎ, এ চিত্র সত্যিই স্পষ্ট যে, মোদী-জমানায় দেশজুড়ে ক্রমশ বেড়েই চলেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদের আস্ফালন। প্রকাশ্যে এসেছে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা। প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেককেই। রবিবার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের খুনের বিচার চেয়ে কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। এদিন ডোরিনা ক্রসিং থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল অনুমোদিত অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সোমনাথ শ্যাম, আইএনটিটিইউসির উত্তর কলকাতার সভাপতি স্বপন সমাদ্দার প্রমুখ। এছাড়াও রাজ্য কোর কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
আরও পরুনঃ এখনও হিংসায় উত্তপ্ত ‘ডবল ইঞ্জিন’ মণিপুর – জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় নিহত ১, জখম ৫
উল্লেখ্য, একদিকে যেমন বিজেপিশাসিত রাজ্যে খুন হচ্ছেন বাংলার শ্রমিক, অন্যদিকে ভিনরাজ্য থেকে বাংলায় আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলার তৃণমূল সরকার আর ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের এহেন পার্থক্যই তুলে ধরল আইএনটিটিইউসি। এদিন মিছিলের শেষে পথসভা থেকে ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ায় ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের মোদী সরকারকে কড়া ভাষায় একহাত নিলেন তিনি। “গোটা দেশজুড়ে যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ, বিশেষত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বেছে বেছে ক্রমাগত যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর হামলা তার প্রতিবাদেই এই মিছিল। বাইরের রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যেও প্রায় ১ কোটি মতো পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। কোথাও এমন আক্রমণ হয়েছে বলে জানা নেই। যাঁরা বাইরের রাজ্যের কিন্তু এরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিক মৃত্যুর থেকে শুরু করে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা খুনে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। এমনকী বালাসোর ট্রেন দুর্ঘটনার সময়েও রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ৬ কোটি টাকা ৭০০ পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে এই লড়াই চলছে। বাঙালি হওয়া কোনও অপরাধ নয়। বাংলা ভাষায় কথা বলা কোনও অপরাধ নয়। মাছ খাওয়া কোনও অপরাধ নয়”, স্পষ্টতই জানালেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি।
লিঙ্কঃ https://x.com/ekhonkhobor18/status/1832414664011251957