ভোট যতই এগিয়ে চলেছে, বাংলার বুক থেকে যেন ততই মিলিয়ে যাচ্ছে বিজেপির হাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মোদী-ঝড়ের দাপট ২৪শের নির্বাচনে কী স্তিমিত হয়ে গেল? বিগত ১০ বছরে যাঁরা মোদীর উপর আস্থা দেখেছিলেন তাঁরা এবারের ভোটে হতাশ। তাঁদের বড় অংশ আসানসোলের অবাঙালিরা। এই কেন্দ্রের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকাতে কট্টর বিজেপি মানসিকতার লোকদের ভোট না দেওয়ার প্রবণতা এই কথাটাই প্রমাণ করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছে, আসানসোল কেন্দ্রে এবার ভোট পড়েছে ৭৩.২৭ শতাংশ। চতুর্থ দফায় যে ৮টি আসনে নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে সর্বনিম্ন। দেখা গিয়েছে অবাঙালি এলাকাগুলিতেই ভোট অনেক কম পড়েছে। অথচ, একটা সময়ে এই এলাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছে পদ্মশিবির। বিগত ১০ বছরে মোদী সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে এখন সেই অবাঙালিরাই চরম বিরক্ত। তাই ভোটের দিন বুথমুখো হননি গোঁড়া বিজেপি পরিবারের অনেক সদস্য।
এবিষয়ে রাজনৈতিক মহলের মতে, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির গড় বলে পরিচিত বার্নপুর শহর। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও পদ্ম শিবির এখান থেকেই বিশাল লিড নিয়েছিল। ২০২২ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা। সেই সময়েও বার্নপুরের সব ওয়ার্ডে লিড ধরে রেখেছিল বিজেপি। বিজেকে ভূমিপুত্র দাবি করা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য এস এস আলুয়ালিয়া বিজেপির প্রার্থী হলেও এবার ওইসমস্ত ওয়ার্ড ভোট দানের হার লক্ষণীয়ভাবে কম। বার্নপুরের ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৬ হাজার ৮৮৩টি। এবারে ভোট পড়েছে মাত্র ৩ হাজার ২৯০। যা আগের তুলনায় ৪৮ শতাংশরও কম। ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৮ হাজার ৮৬৮ জন। এবারে ভোট পড়েছে ৫ হাজার ৮৭৭। আসানসোল পুরসভার ২৭ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কাউন্সিলার রয়েছেন। এবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ হাজার ৩৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫ হাজার ৮৬৫টি। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ৭ হাজার ২২৪টি ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৯২৭টি। এতেই দুশ্চিন্তা মাথাচাড়া দিয়েছে বঙ্গ পদ্মশিবিরের অন্দরে।