সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তাকে পাখির চোখ করে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। আজ, রবিবার ব্রিগেডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃণমূলের ‘জনগর্জন’ সভা। ইতিমধ্যেই বিপুল জনসমাগমে ভরে উঠেছে ব্রিগেড মাঠ। ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’, রবিবার ব্রিগেড থেকে এই সুরেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিল তৃণমূল। সেই সভার মঞ্চ থেকেই তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে ব্রিগেডের জনগর্জন সভায় ভাষণ শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অভিষেক দাবি করলেন, দু’সপ্তাহের কমেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। তৃণমূল ছাড়া বাংলার সব দলের ব্রিগেড আয়োজন করতে ৬ দিন লাগবে। তৃণমূলের ১২ দিন লেগেছে। বিজেপিকে একহাত নিয়ে তিনি বললেন, “বিজেপির কাছে টাকা-পয়সা আছে, বিচারব্যবস্থার একাংশ আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। আর তৃণমূলের কাছে মানুষ আছে। মানুষ বনাম এই রাষ্ট্রশক্তির লড়াই করতে চেয়েছিলাম। আজ যাঁরা ব্রিগেডে এসেছেন, তাঁরা সুনিশ্চিত করেছেন যে আগামীর রায়, বাংলার বিরোধীরা বিদায়। আগামীর রায়, স্বৈরচারীরা বিদায়। আগামীর রায়, অত্যাচারীরা বিদায়। আগামীর রায়, লাঞ্ছনাকারীদের বিদায়।আগামীর রায়, বহিরাগতদের বিদায়।”
পাশাপাশি, অভিষেক বলেন, “এটা তৃণমূলের ব্রিগেড নয়। এটা ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়া মানুষদের ব্রিগেড, খেটে খাওয়া মানুষদের ব্রিগেড। এই ব্রিগেড থেকে বিজেপির বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল। আমরা কথা দিয়েছিলাম। কথা রেখেছি আমরা। আমরা নয়া কর্মসূচি চালু করতে চলেছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করবেন – ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’। এমন আওয়াজ তুলুন, যাতে দিল্লী কেঁপে যায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি যাঁরা ভাঙেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? স্বামী বিবেকানন্দকে যাঁরা অপমান করেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? যাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জানেন না, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? যাঁরা ১০০ দিনের কাজে টাকা বন্ধ করেছেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? বিজেপি বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? দিল্লীতে ভূমিকম্প চাই। আরও জোরে আওয়াজ করুন। যাঁরা বাঙালিকে বাংলাদেশি বলেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? যাঁরা বাঙালিকে বাংলাদেশি বলেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? যাঁরা সংখ্যালঘু মানুষদের পাকিস্তানি বলেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? যাঁরা শিখদের খলিস্তানি বলেন, তাঁরা বাংলা বিরোধী কিনা বলুন? এককথার ছেলে আমি। দিদি কথা দিয়ে কথা রাখেন। তৃণমূল কথা দিয়ে কথা রাখেন। গ্যারান্টি দেয়, যেটা ওয়্যারেন্টির জিরো (মোদী কী গ্যারান্টি, জিরো ওয়্যারেন্টি)। আগে চোরেরা চুরি করে জেলে যেত, এখন বিজেপিতে যায়।”
মোদীকে বিঁধে অভিষেকের বক্তব্য, “২০২১ সালের ২রা মে বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কতবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? দেশের অন্য রাজ্যে তো গিয়েছেন। এখানে আসেননি কেন? পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের অংশ নয়? আপনারা তো পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশের মতো দেখেন। ভোট ইডি, সিবিআই দেবে না, ভোট দেবেন মানুষ। চলবে না অন্যায়, টিকবে না ফন্দি। বিজেপির বাবুরা জেনে রাখুন, মানুষের আদালতে বিজেপি হবে বন্দী। আমি বিচারপতি নিয়ে কিছু বলব না। আমি শুধু বলব, আগে আমাদের দেশে কেউ যদি চুরি না খুন করত, তাহলে তাঁদের জেলে পাঠাতেন বিচারপতিরা। আর মোদীজির ভারতবর্ষে চোরেরা-খুনিরা উত্তরীয় পরে বিচারপতিদের দলে স্বাগত জানাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার যদি প্রমাণ করে দেখাতে পারে যে ২০২১-২২ অর্থবর্ষ, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বিজেপি সরকার বাংলাকে ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার এক টাকাও দিয়েছে, তাহলে আমি রাজনীতি থেকে অবসর নেব।” শুভেন্দু অধিকারীকেও তোপ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বললেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো দুর্নীতির কথা বলে গেলেন। তাঁর পাশেই তো সবথেকে বড় দুর্নীতিবাজ বসে আছেন।” প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করলেন অভিষেক। মিডিয়ার সামনে বসে পরিসংখ্যান নিয়ে তর্কের জন্য কাউকে পাঠান মোদী, স্পষ্ট জানিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।