প্রায় দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। তবুও আভ্যন্তরীণ কোন্দল পিছু ছাড়ছে না বঙ্গ বিজেপির। জেলায় জেলায় মাথাচাড়া দিচ্ছে বিক্ষোভ। কার্যত দিশেহারা বাংলার গেরুয়াশিবির। নির্বাচনের টিকিট-বিদ্রোহের আঁচে রীতিমতো পর্যুদস্ত গোটা দল। প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই এই অবস্থা। বিজেপির তথাকথিত গড় উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়েছে। জন বার্লা থেকে রাজু বিস্তা, ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে। আলিপুরদুয়ারের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ জন বারলা প্রকাশ্যে বলছেন, জেলা সভাপতি মনোজ টিগ্গার কলকাঠিতেই নাকি তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। দার্জিলিং নিয়ে শ্রীংলা ও বিস্তার দড়ি টানাটানি চলছে। বিজেপির দলীয় যাবতীয় কাঠামো ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা দাবি করেন, তিনিই ওই কেন্দ্রের প্রার্থী। সোমবার রাতেই, রায়গঞ্জ ছেড়ে কলকাতা রওনা দিয়েছেন উত্তরের আরেক সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। জোর গুঞ্জন, দেবশ্রী নাকি টিকিট পাবেন না। হয়ত দেবশ্রীকে বারাসত কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে। ওই কেন্দ্রে অবশ্য রাহুল সিনহার নামও শোনা যাচ্ছে। দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে তপন সিকদারের ভাইপো সৌরভের নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্রোহের আঁচ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি নিয়েও ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। শোনা যাচ্ছে, ওই কেন্দ্রের সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায় হয়ত টিকিট পাবেন না। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে জন বারলার বদলে বিজেপি মনোজ টিগ্গাকে প্রার্থী করেছে। ক্ষুব্ধ বারলার সাফ কথা, ২০১৪ সালের আগে তরাই-ডুয়ার্সের চা-বলয়ে বিজেপির ঝান্ডা লাগানোর লোক ছিল না। তিনি বিজেপিতে এসে সংগঠন তৈরি করেছেন। আজ, বুধবার টিগ্গা যান বারলার বাড়িতে। তবে তরাই-ডুয়ার্সের আদিবাসী মহল্লায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বারলার অনুগামীদের ক্ষোভ ক্রমবর্ধমান। রাজনৈতিক পরিসরে জোর চর্চা, দার্জিলিং কেন্দ্রে মোদী ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে প্রার্থী করা হচ্ছে। কিন্তু দিল্লি থেকে ফিরে রাজু বিস্তা বিদ্রোহের সুর চড়িয়েছেন। কালিম্পংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাও সামিল হয়েছেন। তাঁর দাবি, ভূমিপুত্র প্রার্থী না হলে নিজেই নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়াবেন। গ্রেটার কোচবিহারের ইস্যুকে সামনে রেখে বিদ্রোহী অনন্ত মহারাজের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বিষ্ণুপ্রসাদ। শোনা যাচ্ছে, অনন্ত মহারাজকে জলপাইগুড়ি থেকে টিকিট দিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করতে পারে বিজেপি। সব মিলিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ভোটের মুখে কার্যত ঘুম উড়েছে পদ্ম-নেতৃত্বের।