২০২১ সালের নভেম্বর— প্রথম বার পিছু হটেছিল মোদী সরকার। প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল তিনটি ‘বিতর্কিত’ কৃষি আইন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি— ট্রাক চালকদের আন্দোলনে ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট একটি ধারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সংসদে সংখ্যার জোরে বিল পাশ করিয়ে নিলেও মাঠে-ময়দানে আন্দোলনের সামনে কি মাথা ঝোঁকাতে হচ্ছে মোদীর সরকারকে?
দিল্লির উপকণ্ঠে টিকরি সীমান্তে নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলন দেখেছিল গোটা দেশ। ‘অন্নদাতা’দের টানা আন্দোলন রাজধানীকেও আন্দোলিত করেছিল। সেই আন্দোলন কখনও কখনও ‘নিরামিষ’ থেকে ‘আমিষ’ হয়েছিল। ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট লালকেল্লায় ঢুকে পড়ে হইহই ফেলে দিয়েছিল আন্দোলনরত কৃষকদের একটি অংশ। সেই আন্দোলনকে বিজেপির কোনও কোনও নেতা কটাক্ষ করেছিলেন। কেউ আবার নরম স্বরেই বলেছিলেন, আইন বদলানো যায় না। গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে এ-ও অভিযোগ করা হয়েছিল, ওই আন্দোলনে বিদেশের টাকা রয়েছে। বাইরের শক্তি ভারতকে ‘অস্থির’ করতে চায়। কিন্তু শেষমেশ আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্র।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ন্যায় সংহিতা বিল পাস করিয়ে তাকে আইনে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে অধিবেশনে গণ সাসপেনশনের মাধ্যমে সংসদ কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে গিয়েছিল। বিরোধীদের বক্তব্য, বিতর্ক, আলোচনা এড়িয়ে আইন পাশ করতেই সংসদ ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল বলে বিরোধীপক্ষের অভিযোগ। তার পরে পাশ করানো হয়েছে ‘অন্যায় সংহিতা’। কিন্তু সেই আইন পাশ হলেও গত কয়েক দিন ধরে ট্রাকচালকদের আন্দোলনে স্তব্ধ হয়ে যায় সারা দেশের পণ্য পরিবহণ। যার আঁচ পড়েছিল স্বয়ং মোদীর রাজ্য গুজরাতের বন্দর এলাকাতেও। শেষমেশ বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা পরিবহণ সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে আশ্বাস দেন, ন্যায় সংহিতার ১০৬/২ ধারা আলোচনা না করে কার্যকর করা হবে না। যে ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাকচালকেরা কাউকে চাপা দিয়ে পালিয়ে গেলে ১০ বছরের জেল ও সাত লক্ষ টাকা জরিমানা হবে। ট্রাকচালকেরা ‘অন্যায়’ সম্পর্কে বলেছেন, দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় থাকে না। নচেৎ গণপিটুনিতে তাঁদেরও প্রাণ যাবে।