আজ ‘মহালয়া’। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনার দিন। যদিও এ’ কোনও উৎসবের দিন নয়। এমনকি শাস্ত্রমতে একে শুভও বলা চলে না। কিন্তু তারপরেও গোটা বছর ধরে বাঙালি এই দিনটির অপেক্ষায় বসে থাকে। যার অন্যতম কারণ রেডিওর এক অনুষ্ঠান— ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। যদিও আদ্যিকালের ট্রানজিস্টার ছেড়ে এখন তার জায়গা হয়েছে মূলত মুঠোফোনে। আবার চাইলে বছরের যে কোনও সময়েই যে কোনও জায়গায় বেজে উঠতে পারে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর…’। কিন্তু তাতেও বছরের এই নির্দিষ্ট দিনে বাঙালির ‘মহালয়া’ শোনার অভ্যাস তো আর যায়নি। একটা অনুষ্ঠান কোন মেধাগত উচ্চতায় পৌঁছলে, সামগ্রিক ভাবে একটি জাতির পার্বণের সঙ্গে মিশে যায় যায়, তা সহজেই অনুমেয়। আর এ তো কয়েকবছরের ঘটনা নয়। দীর্ঘ ৯১ বছর ধরে বাঙালির চিরন্তন অভ্যাস।
১৯৩০ সালে ভারত সরকারের আওতায় আসে বেতার। তারপর থেকেই নতুনভাবে শ্রোতাকে আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভাবনা শুরু। তারপরের দু-বছর রেডিওর অনুষ্ঠান নিয়ে রীতিমতো এক্সপেরিমেন্ট চলেছিল। আর সেই আবহেই বাণীকুমার প্রস্তাব দিলেন, দেবী দুর্গার মর্তে আগমন ঘিরে যদি একটা সঙ্গীতবহুল অনুষ্ঠান করা যায়। এ যে একেবারে নতুন কিছু তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তারও আগে এইধরনের এক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছে বাসন্তী পুজোর প্রাক্কালে। সেই অনুষ্ঠানেও দেবীবন্দনা, স্তোত্রপাঠ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আগমনি গান শুনেছিল রেডিওর শ্রোতারা। এবার বাণীকুমারের পরিচালনায় শুরু হল শারদীয়ার আগে আরেক আগমনী অনুষ্ঠান। ১৯৩২ সালে সেই শুরু। আজও স্বমহিমায় বিরাজমান মহিষাসুরমর্দিনী।
তখন অবশ্য এই অনুষ্ঠান মহালয়ার দিন হত না। শাস্ত্রমতে দেবীর বোধন হয় ষষ্ঠীর দিনে। প্রথমে সেইদিনেই সম্প্রচারিত হত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। পরে ১৯৩৬ সাল থেকে সম্প্রচার শুরু হয় মহালয়ার দিনেই। এখনও সেই রীতি বদলায়নি। তবে ‘আকাশবাণী’-র প্রযোজনায় এই অনুষ্ঠানে বহু রদবদল হয়েছে। বর্তমানে আমরা যে রেকর্ডিংটি শুনতে পাই, তার নেপথ্যে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিকের মতো ব্যক্তিত্বরা। এই একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এঁরা বাঙালির কাছে চির অমর হয়ে রয়েছেন। তবে তা হওয়ার জন্য কম ঝড় সহ্য করতে হয়নি। কায়স্থ হয়ে কীভাবে চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন ভদ্র, উঠেছিল এই প্রশ্ন। পালটা কড়া জবাব দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বাণীকুমার। শুধু তাই নয়। মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে মুসলিম যন্ত্রশিল্পী রেখেছিলেন তিনি।