প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে একের পর এক বিদেশ সফর করেছেন তিনি। তৃতীয়বারের জন্য সরকারে এসেও এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বিপুল সংখ্যায় কাজের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ টানাই তাঁর পাখির চোখ। এবারের বিদেশ সফরে যেমন স্পেনের লগ্নিকারীদের বাংলায় আহ্বান জানাতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি। দুই, বিপুল কাঁচামাল এবং দক্ষ কর্মী। তিন, রাজ্য সরকারের শিল্পবন্ধু মানসিকতা এবং ‘এক জানালা নীতি’, কর ছাড়-সহ বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা। চার, শিল্পের জন্য আলাদা জমির নির্দিষ্ট ল্যান্ড ব্যাঙ্ক। মূলত বাংলার এই চারটি বৈশিষ্ট্যকেই তাঁদের সামনে তুলে ধরতে চান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, স্পেন যাওয়ার পথে মঙ্গলবার কলকাতা থেকে এমিরেটসের উড়ানে দুবাই পৌঁছন মমতা। বুধবার সকালে ধরলেন মাদ্রিদের বিমান। সঙ্গে ছিল প্রতিনিধি দল। স্পেনের মাটিতে পৌঁছবেন দুপুরে। প্রথমে কর্মসূচি মাদ্রিদে। পরের কর্মসূচি বার্সিলোনায়। করোনাকালের যে নিস্তরঙ্গ পরিস্থিতি, তা কাটিয়ে আবার পূর্ণ উদ্যমে শিল্প টানার অভিযানে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। শুধু বড় ও মাঝারি, বা ক্ষুদ্রশিল্পের ট্র্যাডিশনাল শাখাগুলিই নয়, তিনি নজর দিচ্ছেন সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ফুটবলেও। লা-লিগা কমিটির সঙ্গেও বৈঠক রয়েছে তাঁর। বাংলার ফুটবল পরিকাঠামোকে চাঙ্গা করতে নতুন কিছু পরিকল্পনা ঘুরছে মুখ্যমন্ত্রীর মাথায়।
এমনিতে ভারতের সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক মোটামুটি ভালই। স্পেনই ভারতের ১৫তম বৃহৎ লগ্নিকারী। ১৯৫টি স্প্যানিশ সংস্থা ভারতে কাজ করে। আর ৪০টি ভারতীয় সংস্থা স্পেনে কাজ করে। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে স্পেন ভারতের অষ্টম বৃহৎ বাণিজ্যবন্ধু। স্পেন ভারত থেকে কেনে মূলত পোশাক, অর্গানিক কেমিক্যাল, ইস্পাত, লোহা, চর্মজাত সামগ্রী, অটোমোবাইল, সামুদ্রিক খাদ্য। আর ভারত আমদানি করে কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারি, মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল। এর মধ্যে বাংলার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাবনা রয়েছে স্পেনের লগ্নি আকর্ষণের। এর হোমওয়ার্ক করার পর সেখানকার শিল্পপতিদের সামনে এখানকার পরিস্থিতি পেশ করবেন বাংলার প্রতিনিধি দল।
মুখ্যমন্ত্রীর সচিবরা এবং শিল্পোন্নয়ন নিগম কয়েকটি জরুরি নোট তৈরি করে এনেছেন। তাতে বাংলার উন্নয়নে যাবতীয় তথ্য পরিসংখ্যান রয়েছে। পরিকাঠামো থেকে শুরু করে সামাজিক স্কিমগুলি পর্যন্ত, এমনকী, ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্লাবগুলিকে সাহায্য, সবই এই নোটে রয়েছে। নতুন যাঁরা লগ্নি করতে আসবেন তাঁদের কোনও জটিলতার মুখে পড়তে হবে না, জমি থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক যাবতীয় বন্দোবস্তে সরকার সাহায্য করবে, এর নিশ্চয়তা এখানকার বণিককুলকে দিয়ে দেওয়া হবে। ট্র্যাডিশনাল শিল্পের পাশাপাশি বই, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, খেলার ক্ষেত্রকেও পরিকাঠামোগত চেহারা দিতে চান মমতা। লা লিগার সঙ্গে বৈঠকে থাকার কথা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কলকাতার তিন প্রধানের প্রতিনিধিদের।