ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে পাক-মুলুকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রবল সংশয়। তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে সেনা ও পুলিশ। চাপের মুখে বেশ কিছু প্রথমসারির নেতা দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। একই মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ঘোষণা করেছেন যে, ইমরানের পার্টি ‘তেহরিক -ই ইনসাফ’কে নিষিদ্ধ করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে পাক সরকার। তাঁর বক্তব্য, “গত ৯ই মে পিটিআই সমর্থকেরা দেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তারপর তাদের রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি থাকতে পারে না।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই ব্যাপারে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এখনও কোনও পদক্ষেপের কথা জানায়নি। আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলকে স্বীকৃতি এবং তা বাতিল করার অধিকার আছে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘সরকার পিটিআই’কে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদ থেকে পাশ করিয়ে নেবে। ফলে আইনে কোনও বাধা থাকবে না। ইমরান খানকে ৩১শে মে পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না বলে ইসলামাবাদ হাই কোর্ট গত সপ্তাহে রায় দিয়েছে। তবে সেনা আইনে সেনাবাহিনী চাইলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পারে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ পুলিশ ও সেনা ইমরানের লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। সেই বাড়িতে বসে ইমরান এখন সাংবাদিকদের মাধ্যমে নেতাদের আর্জি জানাচ্ছেন দল না ছাড়তে। একই সঙ্গে সেনাকেও ধরপাকড় থামানোর আর্জি জানিয়েছেন। আর্জি জানিয়েছেন দেশের মানবাধিকার কমিশনকে। পাশাপাশি জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত আদালত ও মানবাধিকার কমিশনের।
অন্যদিকে, ইমরানের পার্টির প্রধান মুখপাত্র এবং দীর্ঘদিনের সাংসদ শিরিন মাজারি দল ছাড়ার পাশাপাশি রাজনীতি থেকেই অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। শিরিনের সিদ্ধান্ত ইমরানের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। সেনা ও সরকারের চাপের মুখে শিরিন দল ছেড়েছেন বলে ইমরানের অভিযোগ। এই বিষয়ে তিনি মুখ খোলার সময়ই খবর আসে আরও এক শীর্ষ নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী দল ছেড়েছেন। তিনিও রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন। যা দেখে মনে করা হচ্ছে সেনার চাপের মুখেই পিটিআইয়ের প্রথমসারির নেতারা দল ছাড়ছেন। উদ্দেশ্য, দলে ইমরানকে নিঃসঙ্গ করে দেওয়া। এর মধ্যে সাংবাদিক বৈঠকে ইমরান কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে আবেগের প্রলেপ দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার দলের কর্মী-সমর্থকদের অবস্থা এখন হিন্দুস্থানের দখলে থাকা কাশ্মীরীদের মতো। সেখানে মানবাধিকারের বালাই নেই। যখন তখন ভারতীয় সেনা গিয়ে সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। আমার দলের লোকেদের সঙ্গেও হিন্দুস্থানের ফৌজের মতো ব্যবহার করছে পাক সেনা ও পুলিশ।” সূত্রের খবর, ৯ই মে ইমরান গ্রেফতার হওয়ার পর লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, ইসলামাবাদ জুড়ে পিটিআই সমর্থকেরা সরকারি ভবন ও সেনা ছাউনিতে হামলা চালায়। ১০টি সেনা ব্যারাকে ভাঙচুর এমনকী সেনা অফিসারদের বাংলোতেও হামলা করা হয়। এমন হিংসার নজির পাকিস্তানে নেই। ইমরান সমর্থকদের হামলার ঘটনায় সাধারণ প্রশাসনের ভূমিকায় পাক সেনা চরম অসন্তুষ্ট। তারা সরকারের উপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে ইমরান ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ইতিমধ্যে সেনা ও সরকার ৯ই মে’কে কালো দিবস ঘোষণা করেছে। পাক সেনা বাহিনী ব্যারাকের উপর হামলার ছবি এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেনা ছাউনিতে হামলার দৃশ্য। ছড়িয়ে পড়েছে অফিসারদের মারধর, তাঁদের বাংলো আক্রমণের ভিডিও। পাশাপাশি সেনা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড়ও শুরু করেছে। সূত্রের খবর, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সেনা পাল্টা প্রচারে নামার পর সাধারণ নাগরিকেরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। গত কয়েকদিন ইমরানের প্রতি সমর্থনের যে ঢেউ উঠেছিল তা কিছুটা স্তিমিত। সুর নরম করেছেন ইমরানও। তিনি সেনাকে অনুরোধ করে চলেছেন সংযত হতে। সমাজমাধ্যমে বলেছেন, “আমি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাই। দলের পক্ষ থেকে কমিটি গড়ে দিচ্ছি। কমিটি সরকারের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করবে।” দলের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে চলেছে বুঝতে পেরেই অনেক নেতা আগেভাগে পিটিআই ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে নিজেকে সেনার কোপ থেকে রক্ষার চেষ্টা শুরু করেছেন ইমরান, এমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।