সম্প্রতি রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থার ওপর একটি রিপোর্ট পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। আর সেই রিপোর্টেই মুখ পুড়ল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের। কারণ আরবিআইয়ের রিপোর্ট বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় লাগাতার কমছে ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত। রাজ্যে ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কিন্তু তার চেয়েও বহুমাত্রায় বেড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহর। ফলে ঋণের অঙ্ক বাড়লেও আর্থিক বৃদ্ধির হার লাগাতার বেড়ে চলেছে। আর এই ঘটনাই বলে দিচ্ছে, রাজ্যের আর্থিক হালের ভোল বদলেছে মমতা জমানায়।
সেটা কী রকম? ধরা যাক, কেউ একজন মাসে ১০০ টাকা আয় করেন। তাঁর ঋণ রয়েছে ৬০ টাকা। পরের মাসে তাঁর ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। ঋণের পরিমাণ বাড়ল। কিন্তু একইসঙ্গে যদি ওই ব্যক্তির আয় বাড়ে, সেক্ষেত্রে? ধরা যাক, তাঁর আয় একশো থেকে বেড়ে দুশো টাকা হয়েছে। তাহলে ঋণের আনুপাত গিয়ে দাঁড়াল ৪০ শতাংশে। এতদিন যা ৬০ শতাংশে ছিল, আয় বাড়তেই তার ২০ শতাংশ কমে গেল। ঋণের অঙ্ক আর বোঝা হয়ে চাপবে না। রাজ্যের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থার উপর একটি রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালের মার্চে বাংলায় ঋণের ভার ছিল ৪১.৯ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলায় ১০০ টাকার পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঋণের ভার ছিল প্রায় ৪২ টাকা। তারপর তা কমে ৩৪.৬ শতাংশে নামে। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের শেষে তা হঠাৎ করেই বেড়ে ৩৯.৫ শতাংশে পৌঁছয়। তারপর থেকে ক্রমেই কমছে ঋণভার। ২০২১ সালের মার্চ শেষে তা ৩৮.২ শতাংশে নামে। ২০২১-২২ শেষে ঋণ ও জিডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ৩৫.৮ শতাংশে। চলতি অর্থ বছর শেষে তা ৩৫.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স বলছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২০-২১ অর্থাৎ ছটি অর্থবর্ষে রাজ্যগুলিতে যেভাবে ঋণের নিরিখে জিডিপির অনুপাতের বদল হয়েছে, তাতে শীর্ষে রয়েছে বাংলা। যেখানে অন্য রাজ্যগুলির ঋণের বোঝা বেড়েছে, সেখানে বাংলা লাগাতারভাবে ঋণের বোঝা কমিয়ে ফেলতে পেরেছে। ঋণের হার বাড়ার তালিকায় শীর্ষে পাঞ্জাব। পাঞ্জাবে ঋণের হার বেড়েছে ১৫.৫ শতাংশ। বাংলায় ঋণের বোঝা কমেছে ১.৬ শতাংশ।
রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থ দপ্তরের প্রধান মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্র মনে করছেন, বাংলার মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার সুফল মিলছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, রূপশ্রী, কন্যাশ্রীর মতো সামাজিক প্রকল্পের কারণে সাধারণ মানুষ হাতে টাকা পাচ্ছে, তার ৯৮ ভাগই ফিরে আসছে বাজারে। মানুষ টাকা খরচ করছেন, ফলে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। বাংলার জিডিপিতে তার প্রভাব পড়ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স জানাচ্ছে, অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ঋণভার কমার নিরিখে বাংলা দেশের সব রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।