একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর তারপরেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে শুরু হয়েছে অন্যান্য রাজ্যে সংগঠন বিস্তার করে দলকে সর্বভারতীয় স্তরে মেলে ধরার চেষ্টা। আর সেই লক্ষ্যেই এই মুহূর্তে তৃণমূলের পাখির চোখ ত্রিপুরা। সে রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ২৮ আসনেই লড়াই করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ইতিমধ্যে নির্বাচনের ইস্তাহারও প্রকাশ করা হয়েছে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। একটি সম্মেলনের মাধ্যমে ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ১০ অঙ্গীকার’-এর ঘোষণা করা হয়।
ইস্তাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এই রাজ্যে তৃণমূল জয়লাভ করলে, আগরতলা পুলিশ কমিশনারেট প্রতিষ্ঠিত করা হবে। ১০ হাজার যুবককে মাসিক ১,০০০ টাকা বেকারভাতা দেওয়া হবে। এ ছাড়া যে ১০,৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের সমস্যার আইনি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁদেরকেও এই আওতায় আনা হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সরকারি শূন্যপদ পূরণ করে, প্রথম বছরে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান ও আগামী ৫ বছরে ২ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করার অঙ্গীকার করা হয়েছে নির্বাচনী ইস্তাহারে।
সম্মেলনে উপস্থিত ব্রাত্য বসু জানান, বাংলায় যে উন্নয়নের মডেল তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছে, তাঁর সঙ্গে মানানসই করে, ত্রিপুরার মত করে, যাতে ত্রিপুরা স্বাধীন ত্রিপুরা হয়ে ওঠে তার লক্ষ্যমাত্রা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এই নির্বাচনী ইস্তাহারে। তিনি বলেন, বিজেপি কেবলমাত্র উচ্চবিত্তের সরকার। সাধারণ মানুষের সমস্যার কোনো সমাধান নেই, কৃষকদের দুরবস্থা, কোনো চাকরি নেই, আমজনতার আশা তলানিতে ঠেকেছে। এমতাবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ, মা মাটি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ব্রাত্য বসু আরও জানান, ‘সাংস্কৃতিক সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রচারের মাধ্যমে প্রত্যেক ভাষা ও সম্প্রদায়ের শিল্পীদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করা হবে। পীযূষ কান্তি বিশ্বাস জানান ২৫ বছরে সিপিআইএম-এর অপশাসন থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চেয়েছিল, কংগ্রেসের উপর তাদের ভরসা ছিল না, এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা করে মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু জয়লাভের পর একটা প্রতিশ্রুতিও পালন করা হয়নি। তার বদলে শুরু হয়েছে, বাইকবাহিনীর অত্যাচার ও লুঠতরাজ। এই অত্যাচার, অনাচার, লুঠতরাজ ও নারী নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর ভরসা করতে পারে সাধারণ মানুষ।’
অন্যদিকে, বাংলার আরেক মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সুশাসিত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন তার দর্শন হল মা মাটি মানুষ। এই মা মাটি মানুষের সরকার সাধারণ মানুষের জন্য, তাঁদের অধিকার আদায়ের জন্যই কাজ করছে। বিশ্বজোড়া এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারেও বাংলায় বেকারত্বের হার অনেক কম। কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশ্বে সমাদৃত এবং পুরষ্কৃত। সর্ব ধর্ম, জাতি ও ভাষার সমন্বয়ে সুস্থ, স্বচ্ছ সমাজ গড়ে তোলা তৃণমূল কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য।’ রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব জানান, বর্ষীয়ান নাগরিকদের পেনশন সরকার থেকে অনুমোদন করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা নাগরিকদের কাছে পৌঁছায় না। মাসিক ২,০০০ টাকা তাদের দুয়ারে পৌঁছে দেবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।