আবহমান কাল ধরেই ভারতবর্ষকে মহিমান্বিত করেছে সহাবস্থান ও সম্প্রীতির গৌরব। এবার ফুটে উঠল তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হুইলচেয়ারে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন কেরলের আমগাত্তুচালিল কান্নান। যাচ্ছেন বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে। বিপদের দিনে পাশে থাকা মুসলিম শিক্ষিকা শমিরার জন্য দেবতা আয়াপ্পার আশীর্বাদ আনতে চলেছেন তিনি।কেরলের মাল্লাপুরম জেলা থেকে শবরীমালা মন্দির, ৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে ঠিক ১২ দিন। পামপা নদী তীরে পৌঁছানোর পর কাজে আসবে না হুইলচেয়ার। এরপর পাহাড় চড়ে দেবতার আয়াপ্পার মন্দির পৌঁছবেন বিশেষ ভাবে সক্ষম কান্নান।
স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগছে, শমিরার জন্য এত কষ্ট কেন করছেন যুবক? তা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০১৩ সালের ৩রা ডিসেম্বরে। ওই দিন লরি থেকে ভারী গাছের গুঁড়ি নামাতে গিয়ে অন্ধকার ঘনায় পেশায় দিনমজুর কান্নানের জীবনে। দুর্ঘটনায় একটি পা বাদ যায়। অন্য পা প্যারালাইজড হয়। এরপর থেকে কান্নানের ভরসা হয় হুইলচেয়ার। কাজকর্ম বন্ধ থাকে। এই অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছিল তাঁর। তখনই পাশে দাঁড়ান কনডোট্টির সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপিকা শমিরা। যিনি জাতীয় সার্ভিস স্কিমের কোঅর্ডিনেটরও। শমিরার উদ্যোগেই মাথার উপর ছাদ তৈরি হয় কান্নানের। এবার তাই শিক্ষিকা শমিরার মঙ্গলকামনায় হুইলচেয়ারে শবরীমালায় পাড়ি দিয়েছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম কান্নান। যুবক জানিয়েছেন, বারো দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা অবধি যাত্রা করবেন। এরপর বিশ্রাম নেবেন কোনও মন্দিরে অথবা বিশ্রামালয়ে। ফের সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১১টা অবধি যাত্রা করবেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পৌঁছবেন নদী তীরে। তারপর হুইলচেয়ার থেকে নেমে পাহাড় চড়ার পালা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে কান্নানের স্ত্রী একটি হোটেলে সাফাই কর্মীর কাজ করেন, মেয়ে প্যারামেডিক্যালের ছাত্রী। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘদিন কিছুই করে উঠতে পারছিলেন না তিনি নিজে। তবে সম্প্রতি লটারির টিকিট বিক্রি করা শুরু করেছেন। মোটের উপর চলে যাচ্ছে জীবন। যার জন্য অধ্যাপক শমিরার প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। কান্নানের কথায়, “শিক্ষিকার জন্যই তাঁর জীবনে পরিবর্তন হয়েছে। উনি আমার ও পরিবারের কাছে ঈশ্বরের সমান। আমি আয়াপ্পার একনিষ্ঠ ভক্ত। এই যাত্রা শিক্ষিকার জন্যই। আমার স্থির বিশ্বাস প্রার্থনায় আয়াপ্পা সাড়া দেবেন, শিক্ষিকাকে আশীর্বাদ করবেন।” অন্যদিকে কান্নানের প্রতি স্নেহ ফুটে উঠেছে অধ্যাপিকা শমিরার গলায়। “চার বছর আগে ওঁকে বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করেছিলাম। এখনও বৃষ্টি হলেই আমাকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানান”, জানিয়েছেন তিনি।