তৃতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পথে শপথ নেওয়ার পর বাংলাকে আরও শিল্পবান্ধব করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতোই এগিয়ে চলেছে তাঁর সরকার। এবার ফের বাংলাতে আস্থা রাখলেন শিল্পপতিরা। কারখানা সম্প্রসারণ এবং নতুন সংস্থা অধিগ্রহণ করে আগামী দিনে ব্যবসা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে কলকাতার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম সংস্থা শ্যাম মেটালিক্স অ্যান্ড এনার্জি বা এসএমইএল নামের বেসরকারি সংস্থাটি। সেই কারণে তাঁরা ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। তার মধ্যে ৬ হাজার কোটি টাকা তাঁরা বিনিয়োগ করতে চলেছে বাংলার বুকে। সেক্ষেত্রে এই বিনিয়োগের হাত ধরে বাংলায় খুলে যেতে চলেছে কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের দরজা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশের মধ্যে ভারী ইস্পাত শিল্পের অন্যতম কেন্দ্রের অন্যতম ঠিকানাই হল বাংলা। এখানে বড় সংস্থার পাশাপাশি বহু ছোট-মাঝারি সংস্থাও ইস্পাত এবং ইস্পাতজাত নানা পণ্য উৎপাদন করে। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম হল শ্যাম মেটালিক্স। নিজেদের ব্যবসা বাড়াবার জন্য তাঁরা দুটি পথে হাঁটা দিয়েছে। এক, দুর্বল বা ধুঁকতে থাকা সংস্থা কিনে নেওয়া এবং চালু কারখানার সম্প্রসারণ। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা বাংলার বুকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে থাকা রামস্বরূপ ইন্ডাস্ট্রিজকে অধিগ্রহণ করেছে। আগামী ১ বছরের মধ্যেই সেই কারখানা থেকে পূর্ণ দমে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। তার জেরে খুব কম করেও সেখানে ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে চলেছে। পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়াতে থাকা তাঁদের কারখানাটিকে আরও বাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তার ফলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেই সেখানেও আরও বাড়তি ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের দরজা খুলে যাবে। সব ধরনের পণ্য মিলিয়ে এখন শ্যাম মেটালিক্সের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৮৮ লক্ষ টন। কিন্তু সংস্থার পরিচালন কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে ১.৪৫ কোটি টন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। গত অর্থবর্ষে তাঁদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০,৩০০ কোটি টাকা। আগামী তিন বছরে তাঁরা সেই ব্যবসাকেই ২৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যেতে চান। এখন সংস্থার মোট আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশই আসে ইস্পাতের ব্যবসা থেকে। এ বার অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসার বহর বৃদ্ধিতেও নজর দিচ্ছেন তাঁরা। তবে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তাঁদের প্রথম পছন্দ বাংলার মাটিই। যদিও উড়িষ্যাতেও তাঁদের কারখানা রয়েছে। কিন্তু বাংলার মাটিতেই তাঁরা এবার ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছেন ২টি কারখানার জন্য। যা আগামী দিনে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দিতে পারে। বাংলার শিল্প-মানচিত্রে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।