দিল্লী-পাঞ্জাবের পর গুজরাতকেই পাখির চোখ করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, মোদী রাজ্যে দ্বিতীয় বার বিধানসভা ভোটে লড়তে নেমে একপ্রকার নজরকাড়া পারফরম্যান্সই দিয়েছে তাঁর দল আপ। অন্যদিকে, কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থান কোনও রকমে ধরে রাখতে পারলেও ভোট শতাংশ এবং আসনসংখ্যা দুটিতেই বিরাট ধস নেমেছে। আর কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই গুজরাটে দলের এই বিরাট পরাজয়ের জন্য দায়ী করছে আম আদমি পার্টিকেই।
বস্তুত, গুজরাতে বিজেপির এই বিরাট জয়ের জন্য আপ এবং কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটি অনেকাংশেই দায়ী। কিন্তু আপের আগমনই যে গুজরাতে কংগ্রেসের ধরাশায়ী হওয়ার একমাত্র কারণ, সেটা বললে বোধ হয় ভুল হবে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, কংগ্রেসের এই ভরাডুবির জন্য অনেকাংশে কংগ্রেস নিজেরাই দায়ী। কারণ প্রচারে ঢিলেমি। গুজরাতে যেন ভোটের আগেই হেরে বসেছিল কংগ্রেস। প্রচারে আপ এবং বিজেপি যেভাবে ঝাঁপিয়েছিল, তার ধারেকাছে ছিল না কংগ্রেস।
বস্তুত, সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সেভাবে অস্তিত্বই দেখা যায়নি হাত শিবিরের। ২০১৭ সালে রাহুল গান্ধী কার্যত গোটা গুজরাত চষে ফেলেছিলেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেও প্রচারে দেখা গিয়েছিল। এবারে রাহুল শেষদিকে নমো নমো করে গোটা তিনেক সভা করেছেন, প্রিয়াঙ্কা সেটাও করেননি। আসলে দলের যে ভরাডুবি হতে চলেছে, সেটা জানতেন কংগ্রেস নেতারা। সেজন্যই হারের দায় যেন শীর্ষ নেতাদের উপর না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে চায়ছিল হাত শিবির।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে কংগ্রেস এবং বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি টক্করের সময় কংগ্রেস পেয়েছিল ৪১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোট। এবারে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসের সেই ভোটে বড়সড় থাবা বসিয়েছে আপ। বিরোধী পরিসর কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, আম আদমি পার্টি ভোট পেয়েছে ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে কংগ্রেস আপের দ্বিগুণের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছে। তাঁদের প্রাপ্ত ভোট সাড়ে ২৭ শতাংশ। আর বিজেপি পেয়েছে প্রায় ৫২.৭ শতাংশ।
খাতায় কলমে আপ মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট পেলেও তাঁদের প্রচারের বহরে বড়সড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের। আপ গুজরাতের প্রচারে প্রতি মুহূর্তে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, কংগ্রেস বিজেপিকে রুখতে ব্যর্থ। গেরুয়া শিবিরকে রুখতে পারে তারাই। কেজরিওয়ালরা এমন ভাব করেছেন যেন, মোদীর রাজ্যে একমাত্র তারাই বিজেপির চ্যালেঞ্জার। অথচ, তৃণমূল স্তরে তাঁদের সংগঠন সেভাবে ছিল না। তাতেই সাধারণ, দোটানায় টানা ভোটাররা বিভ্রান্ত হয়েছেন।