দুর্গাপুজোর পাশাপাশি পেটপুজোও বাঙালির কাছে মহোৎসবের মতো! নবমীর রাত্রি বলতেই খাদ্যরসিক বাঙালির মন ফুরফুর করে ওঠে। নবমীর দিন পুজোর আচারের মধ্যে অন্যতম হল বলিদান। কোথাও প্রাণী বলি দেওয়া হয়, যেমন পাঁঠা, মহিষ আবার কোনও কোনও জায়গায় কুমড়ো, চাল কুমড়ো, লাউ ইত্যাদি বলিও চলে। এদিনই আমিষ খাওয়ার রীতি। এর নেপথ্যে রয়েছে পৌরাণিক ব্যাখ্যাও। দেবীপূরাণ অনুযায়ী, চণ্ড ও মুণ্ড; দুই প্রকাণ্ড বলশালী এবং অত্যাচারী অসুরকে বিনাশের জন্য দেবী দুর্গা ভয়ঙ্কর চামুণ্ডা মূর্তি ধারণ করেছিলেন। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিমুহূর্তে দেবী তাদের সংহার করেছিলেন। অন্যদিকে, রামায়ণে বলা হয়েছে সন্ধি মুহূর্তেই রামচন্দ্রের ব্রহ্মাস্ত্র রাবণের দেহ ভেদ করেছিল। দশমীর দিনই বিনাশ ঘটেছিল রাবণের। সেই কারণেই বাংলায় সন্ধিপুজোর পর অনুমতি ছিল আমিষ ভক্ষণের অনুমতি ছিল।
প্রসঙ্গত, কেবল মাংসই নয়, কোথাও কোথাও নবনীর দিন পুজোর ভোগ হিসেবে মাছ নিবেদন করারও চল ছিল। বেহালার সাবর্ণ চৌধুরীদের বাড়িতে সন্ধিপুজোয় ল্যাটামাছ পোড়া ভোগ দেওয়া হত।ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড়ে কনক দুর্গামন্দিরের নবমীর দিন দেবীকে হাঁসের ডিম দেওয়া হয়। শোনা যায়, এই মন্দিরে এককালে নরবলি হত। তবে আজ তা বন্ধ। আজও পাঁঠাবলি হয়। তবে বহুদিন ধরে সন্ধিপুজোর পরই মাংস খাওয়ার চল রয়েছে। একদা বলি ছাড়া মাংস মুখে তুলতেন না সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা। অন্য মাংসকে বলা হত বৃথা মাংস। দেবী মায়ের জন্যে এই মাংস উৎসর্গ করা হয়। তাই এই মাংস বিশেষভাবে রান্না করা হয়। মাংস রান্নায় পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করা হয় না। আদা ও জিরে দিয়েই রান্না হয় সেই মাংস। তাই একে বলা হয় নিরামিষ মাংস।