দেশজুড়ে এখনও বইছে বিতর্কের ঝড়। সমালোচনার তির ধেয়ে আসছে নানান মহল থেকে। স্বাভাবিকভাবেই চাপে বিজেপি। বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাতের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার। গোধরার উপসংশোধনাগারে গত ১৫ বছর ধরে বন্দি ছিল সকলে। সোমবার মুক্তি পেয়ে তারা বেরিয়ে এসেছে। ২০০৮ সালে তাদের সকলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গুজরাত সরকারের শাস্তি মুকুবের মিয়ম অনুযায়ী, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আবেদন করে দোষীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই পনেরো বছর কারাবাসের পর সকলের শাস্তি মকুব হয়েছে। উল্লেখ্য, জেল থেকে বেরনোর পরেই এগারোজন দোষীকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গুজরাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যালয়ে মালা এবং তিলক পরে বসে আছে দোষীরা। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল শোরগোল।
স্বাভাবিকভাবেই, বিলকাস বানোর ১১ ধর্ষকের মুক্তির ঘটনায় হতবাক তাঁর স্বামী ইয়াকুব রসুল। ইয়াকুবের মতে, ন্যায়বিচারের জন্য ১৮ বছরের যুদ্ধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ধর্ষকদের নিয়েও যে মাতামাতি হবে, তা তাঁর কল্পনাতেও আসেনি। গত কয়েক বছরে বার বার নিজেদের ঠিকানা বদলেছে বিলকিসের পরিবার। সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে স্ত্রীর ধর্ষকদের মুক্তি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইয়াকুব। তবে শর্ত ছিল, যে ঠিকানা থেকে তিনি কথা বলছেন, তা যেন প্রকাশিত না হয়। ইয়াকুবের কথায়, “বিলকিস তো এতটাই বিস্মিত যে এখনও পর্যন্ত কারও সঙ্গে ঠিক করে কথাই বলছে না। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্ষকদের মুক্তির ছবি দেখছি। কেউ কেউ এসে জানাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম আমাদের প্রতিক্রিয়া চাইছে।” এরপরই ইয়াকুবের সংযোজন, “প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি যে এমনটা হয়েছে। পরে জানলাম, হ্যাঁ। এটাই সত্যি। বিলকিসকে গিয়ে বললামও সে কথা। ও শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেল।” পাশাপাশি ইয়াকুব বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত এক ঝটকায় তাঁদের ১৮ বছরের লড়াইকে শেষ করে দিয়েছে। গত দু’দশক একের পর এক আদালতে ছুটেছেন তাঁরা। যা পুরোপুরি বিফলে গিয়েছে। “দেখে মনে হচ্ছে ধর্ষকদের নিয়ে উদযাপন শুরু হয়েছে। ওরা যেন নায়ক!”, ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান ইয়াকুব।