একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ বিজেপির অন্দরে মুষল পর্ব চলছে! সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে দলেরই অন্য অংশকে। একের পর এক পুরভোট, উপনির্বাচনে হারের পর সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বড় চেহারা নিয়েছে। এবার যেমন দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে প্রকাশ্যে চলে এল দলের প্রাক্তন এবং বর্তমান রাজ্য সভাপতির মতবিরোধ৷ সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ জবাব বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রশ্ন ছিল, ‘সিবিআই কীভাবে কাজ করে দিলীপদা কী করে জানলেন?’ এ দিন পাল্টা সুকান্তকে নিশানা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ডাক্তারবাবু ভয় পেয়েছেন। কুকুর (ইডি) যদি তার বাড়িতেও পৌছে যায়!’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে সারদা, নারদা সিবিআই তদন্ত নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সেই সিবিআই তদন্ত নিয়ে সরব হন বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার শহরে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানের মঞ্চে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ছিল, ‘সিবিআই গত কয়েক বছর ধরে এখানে ‘সেটিং’ করছিল। অর্থ মন্ত্রক সবকিছু বুঝেই ইডি-কে বাংলায় পাঠিয়েছে। সেটিং যারা করেছে এখন তাঁরা বলছে, ‘ইডি কেন?’ কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, বড় কুকুরকে কামড়াবে।’ স্বাভাবিকভাবেই সিবিআই নিয়ে খোদ দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির এই মন্তব্যে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব৷ দিলীপের এই মন্তব্যে যে তাঁর এবং দলের সমর্থন নেই, তড়িঘড়ি বুঝিয়ে তা দিয়ে সুকান্ত বলেন, ‘দিলীপদা কোথা থেকে বললেন আমাদের জানা নেই। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কীভাবে কাজ করে এটা কোনও রাজনৈতিক নেতার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যদি কেউ মন্ত্রী হন তাহলে তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব৷ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই।’
ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণে গেলে দিলীপকে সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা৷ জবাবে নিজের অবস্থানে অনড় থেকেই সুকান্তর নাম না নিয়ে দিলীপের ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, ‘কে জানত অনুব্রতর এত টাকা। সিবিআইকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভোট পরবর্তী হিংসায় আমার এত কর্মী মারা গিয়েছেন, আদালত সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিল। এফআইআরও হয়নি সেভাবে। আমরা ন্যায় পাইনি। আমি সভাপতি থাকার সময় সিবিআই অফিস ঘেরাও করেছিলাম। ইডি ভাল কাজ করেছে। কুকুর বলেছি, কারণ কুকুর বিশ্বস্ত। ডাক্তারবাবু ভয় পেয়েছেন। কুকুর যদি তাঁর বাড়িতেও পৌছে যায়।’ পেশায় অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদারের ডক্টরেট উপাধি রয়েছে৷ ফলে ডাক্তারবাবু বলে যে দিলীপ নাম না করে তাঁকেই নিশানা করেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আর দিলীপের এই মন্তব্যে যে বঙ্গ বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ল তা-ও বলাই বাহুল্য।