কাটছে না সংকট। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কার্যত নির্জলা উপবাস। তারপরও দেশের নামে জয়ধ্বনি দিতে ভুলছেন না ইউক্রেনের সুমি শহরে আটকে পড়া প্রায় ৮০০ ভারতীয় পড়ুয়া। চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের দিকে রওনা হওয়ার। ভাবছেন, একথা শুনে যদি উদ্ধারে এগিয়ে আসে মোদী সরকার। কিন্তু না, বৃথা চেষ্টা। এল না সাহায্য। উল্টে বিদেশ মন্ত্রক এবং ভারতীয় দূতাবাস দিল কয়েক লাইনের পরামর্শ, “আমরা সুমিতে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রুশ এবং ইউক্রেন সরকারকে যুদ্ধবিরতি এবং সেফ করিডরের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পড়ুয়াদের বলছি, আপাতত শেল্টার-বাঙ্কারেই থাকুন। অহেতুক ঝুঁকি নেবেন না।” এদিকে, হস্টেলে ফুরিয়ে এসেছে খাবার-জল। বিদ্যুৎও নেই। বাইরে বরফ পড়ছে। তাপমাত্রা শূন্যের নীচে। “বাঁচব কীভাবে? কবে আসবে সরকারি সাহায্য?” পড়ুয়াদের গলায় ফুটে উঠছে হাহাকার।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব দিকের শহর সুমি। বাইরে যাওয়ার রাস্তা-সেতু, কিছুই আস্ত নেই। গোটা শহর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত। সুমি স্টেট ইউনিভার্সিটির হস্টেলে ১০ দিন ধরে আটকে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবারও সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে বোমাবর্ষণ। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর বোমারু বিমানের হামলা চলছে। বারবার আবেদন করলেও উদ্ধারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি ভারতীয় দূতাবাস। শেষপর্যন্ত এদিন চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন পড়ুয়ারা। হাতে কোনওমতে বানানো জাতীয় পতাকা ধরে এক ভিডিও বার্তায় তাঁরা জানান, “দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছি। আর নয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তের দিকে রওনা হচ্ছি। যদি আমাদের কিছু হয়, তার জন্য দায়ী থাকবে একমাত্র ভারত সরকার।” ভিড় থেকে মুখ তুলে এক পড়ুয়া চিৎকার করলেন, “এই মূহূর্তে আমাদের সরকারকে খুবই প্রয়োজন।”
এরপর তাঁরা বেরিয়ে পড়েছিলেন হস্টেল থেকে। কিন্তু রাস্তায় গোলাগুলি চলছে। বেশি দূর এগতে দেয়নি ইউক্রেনের সেনাও। তার মধ্যে বিদেশ মন্ত্রকের পরামর্শ চলে এসেছে টুইটারে। অগত্যা দোনামনা করে ফিরে আসতে হয় সেই হস্টেলেই। অধিকাংশ পড়ুয়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে জল খাননি। যেটুকু খেয়েছেন, সেটাও বাইরে থেকে বরফ তুলে এনে গলিয়ে সংগ্রহ করা। একটাই আর্জি পড়ুয়াদের, “আমাদের উদ্ধার করুন, যেভাবে হোক।” প্রথম বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া মহম্মদ নিজামুদ্দিন আমন জানাচ্ছেন, “আমরা এখন দ্বিধাগ্রস্ত। খুব ভয় লাগছে।” অন্যদিকে, খারকিভ থেকে সব ভারতীয়কে উদ্ধার করে নিয়ে আসার খবর জানিয়েছে মোদী সরকার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পিসোচিন থেকে তিনটি বাসে পড়ুয়াদের রাশিয়া সীমান্ত পেরিয়ে ফিরিয়ে আনা হবে। সুমির পড়ুয়াদের হস্টেলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত। নয়াদিল্লীর দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার পড়ুয়াকে বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উদ্ধারকাজে যথেষ্ট উদ্যোগ না নেওয়া মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জয়গান গাওয়ানোয় বিতর্ক বেড়েছে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ছাত্রছাত্রীরাও। যদিও এসবের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এদিন বারাণসীর এক সভায় তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পরিবারবাদীরা নিজেদের স্বার্থে কোনও সুযোগই ছাড়ে না। দেশের সামনে সমস্যার পাহাড় এলেও নয়। এবার তাদের ইস্যু ইউক্রেন। বিরোধীরা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের মিকোলেইভ বন্দরে আটকে রয়েছেন ২১ জন নাবিক। কীভাবে নাবিকদের ফেরানো হবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ভারতের ডিজি শিপিং অমিতাভ কুমার।