ফের বঞ্চনার শিকার বাংলা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী পরিকাঠামো খাতে প্রদেয় অর্থ দেওয়ার কথা এবার স্রেফ ভুলে গেছে মোদীর সরকার। কোভিড পরিস্থিতিতে কোষাগারে টান থাকা সত্ত্বেও, বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে। কারণ কেন্দ্রের প্রদেয় অর্থ পাওয়া যায়নি। সেই টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে প্রতারণাসুলভ আচরণ করছে কেন্দ্র। বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা অব্যাহত রেখে সম্প্রতি আটকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। নবান্ন সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি কেন্দ্র একটি চিঠি পাঠিয়েছে রাজ্যকে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, কান্দি মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প খাতে প্রদেয় ৪১ কোটি টাকা দেওয়া হবে না রাজ্যকে। পাশাপাশি আইলা বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের প্রদেয় ৭০ কোটি টাকা এবং রেলব্রিজ তৈরির দরুণ সেচদপ্তরের খরচ হওয়া ৪২ কোটি টাকাও দিতে নারাজ কেন্দ্র।
এর আগে মনমোহন সিং সরকারের আমলে ঠিক হয়েছিল, কেন্দ্র কান্দি মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ দেবে। ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার পর সেই বরাদ্দ কমিয়ে করা হয় ৫০ শতাংশ। “এবার তো দেখা যাচ্ছে কেন্দ্র নিজের দেওয়া কথাই রাখছে না। প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ২৫ শতাংশ দিয়েই দায় সারতে চাইছে তারা”, এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। কেন্দ্র টাকা নিয়ে গড়িমসি করায় রাজ্য সরকারই নিজের কোষাগার থেকে খরচ করে কান্দি মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চলেছে। যার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫০.৫৮ কোটি টাকা। এর ৫০ শতাংশ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। শুধুমাত্র একটি অংশের কাজের ৮৩ কোটি টাকা ছাড়তেই গড়িমসি করছে তারা। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের বাকি টাকা পাওয়া নিয়েও সংশয়ে রাজ্য।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বর মাসে সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, বন্যা প্রতিরোধের বিভিন্ন প্রকল্প (সুন্দরবনে আইলা বাঁধ, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাঘাই প্রকল্প ও কান্দি মাস্টারপ্ল্যান) খাতে কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য ১,১৬৩ কোটি টাকা এখনও বকেয়া। এমনকী, গত বছরের আগস্ট মাসে তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের মন্ত্রী ও সাংসদের এক প্রতিনিধিদল দিল্লি গিয়ে এ বিষয়ে অবগত করেছিলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতকে। এই মাস্টারপ্ল্যানের অধীনে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে ব্রাহ্মণী, দ্বারকা ও ময়ূরাক্ষী নদীর উপর বাঁধ তৈরি ও মেরামতির কাজ করেছে সেচদফতর। এর ফলে কান্দির সালার, হিজল, বড়ঞা, ভরতপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ফি বছর বন্যায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি এখন রীতিমতো অতীত।