করোনা অতিমারি এবং লকডাউনের ধাক্কা সামলে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ভারতীয় অর্থনীতি। তবে এরই মধ্যে দেশের কর্পোরেট ক্ষেত্রে এক নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্পোরেট অর্থনীতি বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, আর্থিক উদ্যোগ বাদ দিয়েও তালিকাভুক্ত ২৬০০-রও বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলতি আর্থিক বছরের প্রথমার্ধেই বিগত সম্পূর্ণ বছরের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি লাভ করতে সমর্থ হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই উদাহরণ ২০২১-’২২-এর সম্পূর্ণটিই জুড়ে ৬০ শতাংশের আশপাশে বৃদ্ধিকে সূচিত করতে পারে। ২০২০-’২১-এর তুলনায় এই লভ্যাংশ দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু তা বস্তুতপক্ষে ছিল তার আগের বছরের অধোগতির থেকে সামান্য উত্থান মাত্র। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সংখ্যাতাত্ত্বিক নমুনার বাইরেও কর্পোরেট ক্ষেত্রের একটি বৃহৎ অংশ অবস্থান করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেশ কিছু তালিকা-বহির্ভূত বড় সংস্থা (যেমন হুন্ডাই, কোকাকোলা, পেপসি, আইবিএম এবং অ্যাকসেনচার) এবং ব্যাঙ্ক ও বিশালাকার সরকারি সংস্থা (যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল, ওএনজিসি, কোল ইন্ডিয়া ইত্যাদি)-র কথা।
যদিও এখনও পর্যন্ত ব্যাঙ্কগুলি (সরকারি ব্যাঙ্ক সমেত) আগের থেকে ভাল অবস্থায় রয়েছে এবং তালিকা-বহির্ভূত বৃহৎ সংস্থাগুলি তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির চেয়ে ভিন্নতর কিছু করেছে, এমন মনে করার কোনও কারণ নেই। লভ্যাংশের বৃদ্ধির ব্যাপারে সংযত থাকার বিষয়টি নন-ব্যাঙ্কিং সরকারি উদ্যোগগুলির ক্ষেত্রে সম্ভব হতে পারে। তা মেনে নেওয়া এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদযোগগুলির তরফে গুণগত মানের দিক থেকে খারাপ উৎপাদন (সামগ্রিক লভ্যাংশের মধ্যে যে সব উদ্যোগের অংশ নেহাতই সামান্য) সত্ত্বেও কেউ এ বছর লভ্যাংশে স্ফীতির আশা রাখতেই পারেন।
এই সুসংবাদের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যার মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নমুনায় উল্লিখিত বিক্রয়-সংক্রান্ত রাজস্ব (জুলাই-সেপ্টেম্বর চতুর্মাসিকে এক বছর আগের হিসাবের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি) অন্যতম। সেই সঙ্গে রয়েছে সুদপ্রদানের বিষয়ে স্থবিরতা, যা মোট লভ্যাংশের পরিমাণের বৃদ্ধিকেই সূচিত করে। ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কর্পোরেট ঋণ এবং ইকুইটির অনুপাত ছ’বছরের মধ্যে সব থেকে কম পরিমাণে এসে দাঁড়িয়েছে। এই সব পরিসংখ্যান বিবিধ বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে পারে, যার মধ্যে শেয়ার বাজারের সার্বিক ভাবে উজ্জ্বল ছবিটিও বর্তমান।
গত বছর তাঁর বাজেটে অর্থমন্ত্রী কর্পোরেট কর থেকে ৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা ২০২১-’২২ আর্থিক বছরে আয়ের আশা রেখেছিলেন। কার্যত এটি কোভিড সংক্রমণের বছর অর্থাৎ ২০২০-’২১-এর চেয়ে ২২.৬ শতাংশ বেশি। প্রসঙ্গত, সে বছর কর্পোরেট কর বাবদ আয়ের পরিমাণ ছিল ৪.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু প্রাসঙ্গিক ভাবে দেখা যায় যে, তার আগের দুই বছর ২০১৯-’২০ এবং ১০১৮-’১৯-এ আদায়ীকৃত কর্পোরেট কর ছিল এর চেয়ে কম। বলা যেতে পারে, রাজস্ব হ্রাসের দ্বারা দু’বার বিপর্যস্ত হয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর মূল্যায়নে খানিক সাবধানী থাকতে চাইছেন।