মসজিদের নামাজের মাইকই ফেরাল নয়া জীবন। ট্রেন দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সফিকুল আলির পরিবারের কাছে ফেরাটা যেন নবজীবন। পরিবারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলন সিনেমার থেকে কোনও অংশে কম নয়। আসামের এর দারাং জেলার বাসিন্দা সফিকুল ফিরছিলেন গুয়াহাটিতে। মাঝরাস্তায় ময়নাগুড়িতে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে ট্রেনটি।
সেও আল্লার দরবার থেকেই এল খবর। মাইকে ঘোষণা শুনেই তারা বুঝতে পারেন, তাদের পরিবারের ছেলে ভালো আছেন। তড়িঘড়ি জলপাইগুড়ি রওনা হন সফিকুলের দাদা। গোটা ঘটনার দিকে নজর রেখেছিলেন রেলমন্ত্রী স্বয়ং।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে নয় হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, আহতের সংখ্যা ৩৬। তবে জখম ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনায় আহতদের ময়নাগুড়ি হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার ঘটনাস্থলে যান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা।
জানা গিয়েছে, গুরুতর আহত সফিকুলকে উদ্ধারের পর ভর্তি করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। কিন্তু, কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে। তাঁর পরিবার বা আত্মীয় পরিজনের কাছে কোনও মোবাইল ফোন না থাকায় সমস্যায় পড়েন আধিকারিকরাও।
তিনি নিজে সফিকুলের সঙ্গে কথাও বলেন। তাঁর বাড়ির ঠিকানা জেনে নিজে উদ্যোগে নিকটবর্তী পোস্টঅফিস থেকে পোস্টম্যানকে দিয়ে খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করেন রেলমন্ত্রী বিষ্ণোই।
অনেক প্রচেষ্টার পর এক প্রতিবেশীর নম্বর মনে করতে পারেন সফিকুল। সেই নম্বরে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন রেলমন্ত্রী।
কিন্তু, সেই নম্বরে ফোন করেও মেলেনি হদিশ। ফোনের মালিক জানান, সফিকুলের বাড়িতে এইমুহূর্তে কেউ নেই। এমনকী পোস্টম্যানও তাঁর পরিবারের কাউকে খুঁজে পেতে সক্ষম হননি। সেসময় হঠাৎ এলাকার মসজিদ থেকে নমাজ শুনে মাইকে ঘোষণার কথা মাথায় আসে। নমাজ শেষ হতেই মসজিদের মাইক থেকেই সফিকুলের পরিবারের উদ্দেশে ঘোষণা করা হয়।
সৌভাগ্যবশত, ছেলের জন্যই দোয়া করতে মসজিদে এসেছিলেন সফিকুলের পরিবার। দুর্ঘটনার কথা শুনে সফিকুলের কোনও খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় ছিল গোটা পরিবার। মসজিদে আল্লার দরবারেই নিয়েছিলেন আশ্রয়। তাই বাড়িতে পাওয়া যায়নি পরিবারের কোনও সদস্যকে।