করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন ‘ডেল্টা’ বা ‘ডেল্টা প্লাস’ স্ট্রেন নিয়ে মানুষের মনে যে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সূত্রপাত হয়েছিল, ওমিক্রনকে নিয়ে তার বিন্দুমাত্রও নেই। করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট তীব্র সংক্রামক হওয়ায় মাস্ক পরার সচেতনতা অনেকটাই ফিরেছে। কিন্তু, গুজব ও অমূলক আতঙ্কে কর্ণপাত করতে নারাজ মানুষ। কারণ, দেখাই যাচ্ছে, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে, দামী ওষুধপত্র না খেয়েই, সাধারণ প্যারাসিটামল আর অ্যান্টি অ্যালার্জির ওষুধেই দিব্যি সুস্থ হচ্ছেন রোগীরা। ৭ দিনের হোম আইসোলেশনের পর স্বাভবিক জীবনে ফিরছেন, কাজে ফিরছেন। আশঙ্কা যে অনেকটাই কমেছে, তার প্রমাণ দিচ্ছে স্বাস্থ্যভবনের কলসেন্টার বা হেল্পলাইনের তথ্য।
উল্লেখ্য, কোভিড সংক্রান্ত সব ধরনের সাহায্যের জন্য স্বাস্থ্যভবনের কলসেন্টারের নম্বর হল ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২। স্বাস্থ্যভবনের স্বাস্থ্যসাথী বাড়ি ছাড়াও পিজি ও বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পরিচালিত হয় এই টোল ফ্রি লাইন। এই নম্বরে ফোন করলে রেকর্ড করা মহিলা কণ্ঠ ১ থেকে ৫, এই পাঁচটি অপশন দেবে। প্রথম অপশনে জানানো হবে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য। দ্বিতীয় অপশনে রোগী ভর্তিতে সাহায্য। তৃতীয় অপশনে টেলিমেডিসিনে চিকিৎসা, চতুর্থটিতে বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো এবং পঞ্চমটি হল টেলি-কাউন্সেলিং বা করোনার কারণের নানা মানসিক সমস্যার সমাধান। এমবিবিএস থেকে শুরু করে এমডি, এমএস, এমসিএইচ চিকিৎসকরা থাকেন এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে। কখনও কখনও কাজে লাগানো হয় আয়ুর্বেদিক-হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদেরও।
প্রসঙ্গত, আজ থেকে সাত মাস আগে দ্বিতীয় ঢেউয়ের শিখরে ওঠার সময়ে (১০-১৬ মে) এই ফোনের ঠেলায় কলসেন্টারের ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছিলেন। দিনে শুধু উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত মানুষের ফোন আসত প্রায় পৌঁনে ৬ হাজার। অনলাইন প্রেসক্রিপশন চেয়ে ফোন আসত পৌঁনে তিন হাজারের কাছাকাছি। ভর্তির জন্য নিখরচার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ আসত দিনে এক হাজারেরও বেশি। করোনায় মানসিক সমস্যার কাউন্সেলিংয়ের অনুরোধ জানিয়েও ফোন আসত দিনে গড়ে বারোশোর কাছাকাছি। বলা বাহুল্য, সেই সময় গড়ে দৈনিক আক্রান্ত ছিলেন প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি। রাজ্যের মোট কোভিড শয্যার ৪০ শতাংশই থাকত ভর্তি।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে সেই আতঙ্ক আর নেই। ৩ থেকে ৯ই জানুয়ারি রাজ্যে দৈনিক কোভিড আক্রান্ত ধাপে ধাপে বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ২৮২। এই সময়ে দেখা যাচ্ছে, সামগ্রিকভাবে করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানতে ফোন আসছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের অর্ধেকেরও কম, গড়ে প্রায় আড়াই হাজার। অনলাইন প্রেসক্রিপশন চেয়ে ফোন আসছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের অর্ধেক। তিনটি ঢেউয়ের মধ্যে এবার রোগী ভর্তি সবচেয়ে কম। তারও প্রমাণ মিলছে সরকারি পরিসংখ্যানে। অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে ফোন আসছে তিনশো থেকে সাড়ে চারশো। করোনা আতঙ্কে মানুষ তখন ছিল বিধ্বস্ত। আর এখন, রোগ সম্পর্কে আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। কাউন্সেলিংয়ের ফোনও আসছে দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকে অর্ধেক, সাড়ে চারশো থেকে ছ’শো। কাজেই কমছে উদ্বেগ।