ফের বাড়তে চলেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের চাকরির মেয়াদ। ৬৫ থেকে বেড়ে ৬৮ বছর হতে চলেছে অবসরের বয়স। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩রা জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড বিলির অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত এমনটাই খবর বিকাশ ভবন সূত্রে। অধ্যাপকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে, এর নেতিবাচক দিক নিয়ে শেষ মুহূর্তের ‘ব্রেন স্টর্মিং’ চলছে রাজ্য শিক্ষাদফতরে। মঙ্গলবার দপ্তরের প্রশাসনিক বৈঠকেও উঠেছে সেপ্রসঙ্গ।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশ এবং শিক্ষামহলের দাবি মেনে অধ্যাপকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করেছিল রাজ্য সরকার। ২০১৭ সালের জানুয়ারির গোড়ার দিকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামেই অধ্যাপক সম্মেলনে সেকথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার দু’বছর পর অধ্যাপকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয় ৬৫ বছর পর্যন্ত। অন্যদিকে, ৬৫ বছর ছিল উপাচার্যদের স্বাভাবিক অবসরের বয়স। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে তা ৭০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর পথও খোলা রাখা হয় বিল পাশ করে। দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন অধ্যাপককুলের বড় অংশ। তিন বছর পর, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তাঁদের অবসরের বয়স ফের বাড়তে চলেছে বলে দাবি উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই মেয়াদ বৃদ্ধি? শিক্ষক মহলের মতে, এর পিছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, অবসরের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ইউজিসি-ই। অধ্যাপকদের বেতনের একটা অংশ যেহেতু ইউজিসি দিয়ে থাকে, তাই তাদের নির্দেশ মানার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা প্রশাসক বা উপাচার্যের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উপযুক্ত ব্যক্তির অভাব। অধ্যাপকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্ত আরোপ করেছে ইউজিসি, তা বেশ কঠিন। এর ফলে ওই পদে উন্নীত হওয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বহু ক্ষেত্রেই অধ্যাপক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অবসরের সময় চলে আসে। ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ওই পদে তাঁদের পরিষেবা মেলে না। অবসরের মেয়াদ বাড়লে সেই সমস্যা মিটবে। সেই দাবি তুলেছেন অধ্যাপকরাও।
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের চোখে দক্ষ শিক্ষা প্রশাসকদের ধরে রাখাও এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্যতম বড় কারণ। এই মুহূর্তে একাধিক উপাচার্য রয়েছেন, যাঁরা আসলে কলেজের অধ্যক্ষ। সেই হিসেবে তাঁদের চাকরির মেয়াদ এখনও ৬৫ বছর। কয়েকজনের বয়স সেই কোঠায় পৌঁছেও গিয়েছে। এদিকে, তাঁরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাই এ বিষয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হতো। দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রথমে অধ্যক্ষদের বয়স বাড়ানোর ভাবনা ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে সাধারণ অধ্যাপকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধতে পারে বলে যুক্তি উঠে আসে। তাই সবাইকেই এই সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।