দু’হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে একধাক্কায় অনেকটাই আসন বাড়িয়েছিল বিজেপি। বাংলার রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল পদ্মশিবির। বামেদের পিছনে ফেলে প্রধান বিরোধীও হয়ে ওঠে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মসনদ দখলের মরিয়া চেষ্টা চালায়। সরকার গঠনের প্রত্যাশা অধরা থাকলেও বিধানসভায় আসন সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে পদ্মশিবিরের। তবে পুর নির্বাচনে সেই গেরুয়া প্রায় নিশ্চিহ্ন। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যদিও বিজেপি বারবার দাবি করছে, যে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে তাতে শাসক দলের জয় স্বাভাবিক। তবে বিজেপির ভরাডুবি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
কলকাতা পুরনির্বাচনে ১৪৪ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল গেরুয়াশিবির। এর মধ্যে ১১৬ আসনে বিজেপি প্রার্থীদের জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তিনটি আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছে ঠিকই তবে, পুরনো কয়েকটি আসনও হাতছাড়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৯ শতাংশ, পুরসভা নির্বাচনে সেটাই কমে হয়েছে ৯ শতাংশ। পুর নির্বাচনের ফল বলছে, বিরোধী অভিমুখ ক্রমশ ঘুরে যাচ্ছে বামেদের দিকে। ২০১৫-র পুরভোটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৫ শতাংশ, বিধানসভা নির্বাচনে সেটা বেড়ে হয় ২৯ শতাংশ। আর পুরসভা নির্বাচনে সেটাই নেমেছে ৯ শতাংশে। অন্যদিকে বামেদের ঝুলিতে ২০১৫ পুরভোটে ছিল ২৪ শতাংশ ভোট। বিধানসভা নির্বাচনে সেটা কমে দাঁড়ায় ৭ শতাংশে আর এবার পুরসভা নির্বাচনে কিছুটা বেড়ে হল ১১ শতাংশ।
উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নজরে এসেছে। অনেক নেতাই পদ্মের হাত ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তবে, মাত্র কয়েক মাসে সাংগঠনিক শক্তিক্ষয়ে কী পরিণতি হয়েছে, সেই ছবি দেখা গেল পুর নির্বাচনের ফলে। ২০১৫-র পুরভোটে ৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৫১ টি ও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ১২ টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে এবার বিজেপির ঝুলিতে এল মাত্র ৩টি ওয়ার্ড। জয়ী হয়েছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে সজল ঘোষ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মীনাদেবী পুরোহিত ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয় ওঝা। তবে হাতছাড়া হল বড়বাজার, শোভাবাজার, চিৎপুর, বালিগঞ্জের মতো এলাকা।