ভারতের ওয়ান ডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বদল নিয়ে গত ক’দিন ধরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেটে। বিরাট কোহলিকে সরিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রোহিত শর্মাকে। কিন্তু যে ভাবে বিরাটকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতৃত্ব থেকে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারই। এই পরিস্থিতিতে প্রথম মুখ খুললেন রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হওয়ার পরে ভারতীয় বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে রোহিতের কথায় ফুটে উঠল বিরাট সম্পর্কে শ্রদ্ধা। বিরাটের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রোহিত বলেন, “পাঁচ বছর ধরে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে বিরাট। যত বার মাঠে নেমেছি, সেটা দেখেছি।” সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের নতুন অধিনায়ক আরও যোগ করেন, “প্রতিটা ম্যাচ জিততে চাইত বিরাট। মরিয়া হয়ে থাকত জেতার জন্য। সেই বার্তাটা দলের কাছে পৌঁছে দিত। ওর নেতৃত্বে খেলাটা দারুণ উপভোগ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে বিরাটের সঙ্গে খেলছি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতাম এবং করবও।” পাশাপাশি রোহিত পরিষ্কার জানিয়েছেন, বাইরে কী আলোচনা চলছে, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামাতে চান না। রবিবার বিসিসিআইয়ের ওয়েবসাইটে রোহিত বলেছেন, “শুধু অধিনায়ক নয়, ক্রিকেটার হিসেবেও আমি একটা কথা বিশ্বাস করি। বাইরে অনেক আলোচনা চলে, কথা হয়। কিন্তু আমাদের সে সব নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। সে সব আমাদের হাতে থাকে না। আমার লক্ষ্য থাকে, সব কিছু দূরে সরিয়ে নিজের কাজটা করে যাওয়া।” নিজের লক্ষ্যও পরিষ্কার করে দিয়েছেন রোহিত। বলেছেন, “আমাদের উন্নতি করে যেতেই হবে। সেটা ব্যক্তিগত স্তরে যেমন আবার দলগত ভাবেও।”
টিম ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়াটা যে কত বড় সম্মানের, তা বোঝা গিয়েছে রোহিতের কথায়। তিনি বলেছেন, “এই দায়িত্ব পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ এবং সম্মানিত। একটা বিশাল দয়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব পেয়ে আমি খুবই খুশি। সাদা বলের ক্রিকেটে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি মুখিয়ে আছি।” গত বুধবার রোহিতকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাটে দলের নেতৃত্ব দেওয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন কোহলি। যার পরে সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় রোহিতের হাতে। এমনকী, টেস্ট দলেও অজিঙ্ক রাহানের জায়গায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রোহিতকে সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়েছে। রোহিত বলেছেন, “ভারতের হয়ে খেলা মানে দারুণ চাপ সামলাতেই হবে। এটা তো জানা কথা। চাপ সব সময় থাকবে। কারণ বাইরে আলোচনাটা চলতেই থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল, নিজেদের কাজটা ঠিক করে করা। সেই কাজটা হল, মাঠে নেমে খেলাটা জেতা। নিজের খেলাটা মাঠে মেলে ধরা। কে কী বলছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।” এই বার্তাটা দলের সবাইকে দিতেও চান ‘হিটম্যান’। বুঝিয়ে দিতে চান, বাইরের কথায় কান না দিতে।
ভারতের সদ্য নির্বাচিত সাদা বলের অধিনায়ক বলেছেন, “আমি এই বার্তাটাই দলকে দিয়েছি। আমরা যখন খুব বড় প্রতিযোগিতায় খেলতে যাব, তখন অনেক কথাবার্তা হবে, অনেক আলোচনা হবে। সে সব মাথায় রাখলে চলবে না।” কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে সঙ্গে পাচ্ছেন রোহিত। যিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে রবি শাস্ত্রীর জায়গায় ভারতের হেড কোচ হয়েছেন। দ্রাবিড়কে সঙ্গী করে দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে একাত্মবোধটা বাড়াতে চান রোহিত। তিনি জানান, “আমাদের কাছে একটা ব্যাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। আমি অন্যের সম্পর্কে কী ভাবছি, সেটাই আসল।” তিনি আরও বলেছেন, “দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা মজবুত বন্ধন তৈরি করতে হবে। নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য যা খুবই প্রয়োজন। আর সেই কাজটা করতে রাহুল (দ্রাবিড়) ভাই আমাদের সাহায্য করছে।” অধিনায়ক হিসেবে তাঁর ভূমিকা কী হতে চলেছে, তা নিয়েও কথা বলেছেন রোহিত। তাঁর মন্তব্য, “ভারতকে আমি বেশি নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাইনি। যখন পেয়েছি, একটা জিনিস করার চেষ্টা করেছি। কার দায়িত্ব কী, কার ভূমিকা কী, সেটা স্পষ্ট করে ক্রিকেটারদের বুঝিয়ে দেওয়া।” ভারতীয় ক্রিকেটাররা আপাতত বিশ্রামে রয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে ২৬শে ডিসেম্বর থেকে।