নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ন নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। নেতাজি জীবিত না মৃত, জানতে চেয়ে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত, উদ্বুদ্ধ বলে দাবি করা জনৈক ব্যক্তি। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে হলফনামা দিয়ে জানাতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু কি বেঁচে রয়েছেন? নাকি বহু আগেই তাঁর মৃত্যু ঘটেছে? এবার এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে নেতাজি সম্পর্কিত এমনই রিপোর্ট জমা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে এই নির্দেশের ফলে কেন্দ্রের ‘নেতাজি’ অস্বস্তি কিছুটা বাড়ল। নেতাজি সম্পর্কিত কিছু ফাইল প্রকাশ করা হলেও তাঁর মৃত্যু কিংবা বেঁচে থাকা নিয়ে কোন ফাইল প্রকাশ করা হয়নি। এবার সেই তথ্যই হাইকোর্টে জানাতে হবে মোদি সরকারকে।
জনস্বার্থ মামলাকারী হরেন বাগচির তরফে আদালতে আবেদনে বলা হয়, ভারতীয় মুদ্রায় গান্ধীজির রয়েছে। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধিজির মতো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদানও কম নয়। তাই মুদ্রায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ছবিও থাকা উচিৎ। সেই বিষয়েও কেন্দ্রকে হলফনামা দিতে বলেছে আদালত।
প্রসঙ্গত, ২৩ জানুয়ারি ভারতবাসীর কাছে যেমন গর্ববোধের দিন, তেমনই সীমাহীন যন্ত্রণাও নিয়ে আসে। ঠিক কী হয়েছিল নেতাজির সঙ্গে? সত্যিই কি তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন? নাকি তার পরেও বেঁচে ছিলেন, কিন্তু ফিরতে পারেননি দেশে? নাকি ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে পারেননি? কী সেই অজানা সঙ্কট যা আজও জানতে পারেনি গোটা বিশ্ব।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা যাক, ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্টেট আর্কাইভে থাকা নেতাজি সম্পর্কিত সব ‘গোপন’ ফাইল প্রকাশ করেছিল বলে দাবি করা হয়। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৪-এর মধ্যেকার এই ফাইলগুলিতে দেখা যায় নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে সে সময় ১০টি তদন্ত হয়েছিল। সব কটি তদন্তই একই দাবি করা হয়। দাবি করা হয়, ১৯৪৫-এর ১৮ অগাস্ট তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন একাধিক নেতাজি গবেষক। বিচারপতি মুখোপাধ্যায় তদন্ত কমিশন ২০০৫ সালে জানিয়েছিলেন, ১৯৮৫-এর ১৮ অগাস্ট তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনার কোনও প্রমাণই মেলেনি। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে তাইপের মেয়র এক ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, তাইপে সিটি আর্কাইভে ওইদিন তাইপেতে কোনও বিমান দুর্ঘটনার উল্লেখই নেই।
নেতাজির ডেথ সার্টিফিকেট কখনও উদ্ধার হয়নি। তাইহোকু পুরসভার ক্রিমেশন রেজিস্টারের রেকর্ডও বলছে, ১৯-২১ অগাস্টের মধ্যে ৪ জন পুরুষের শেষকৃত্য হয়েছিল সেখানে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে নেতাজি ছিলেন বলে কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। এমনই নানা দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যে ঢুকে রয়েছে নেতাজি রহস্য। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় সরকার কি সেই রহস্য সমাধানে সুস্পষ্ট কোন তথ্য দেবে, সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।
আদালতের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।
আবেদনকারীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে স্পষ্ট হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, নেতাজির অন্তর্ধান সম্পর্কে তাদের প্রকৃত অবস্থান কী।