তিনি দক্ষ রাজনীতিবিদ হলেও, তিনি ছিলেন ভূতে বিশ্বাসী। বলা ভালো তিনি ভূতের ভয় পেতেন ভীষণ রকম। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতি চারণায় বারবার উঠে আসছে মন্ত্রী সুব্রতর মহাকরণে ভূত দেখার গল্প। একাধিকবার সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বহুজন শুনেছেন সেই ভূতের গল্প।
সরকারি দফতরে ভূতের ভয়ের গল্প এই দেশে নতুন কিছু নয়। খাস কলকাতা শহরের বুকে রাজ্যের সাবেক সচিবালয়, রাইটার্স বিল্ডিং-এর ভূতের গল্পের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। আর কালীপুজোর আগে ভূত চর্তূদশী নিয়ে আলোচনা হলে উঠে আসে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মহাকরণের ভূতের কাহিনীও।
কারণ পা মাটিতে নেই ! মাটি থেকে ফুট খানেক উপরে ভাসছে ওই কনস্টেবল, হাওয়ায় দাঁড়িয়ে আছেন ওই কনস্টেবল। কোনও মতে সুব্রতবাবু ঢুকে যান নিজের ঘরে। মন্ত্রীর ঘরে ডাক পড়ে সেন্ট্রাল গেটের পুলিশ অফিসারদের। জানতে পারেন, সে দিন তিনতলায় কাউকে পোস্টিং দেওয়া হয়নি। এরপর সুব্রতবাবু আর রাতে মহাকরণে আসেননি।
মহাকরণে একেবারে নিজের চোখে ভূত দেখার ‘সাক্ষী’ খোদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তৃণমূলের সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী তখন একেবারেই তরুণ। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের দায়িত্বে। দেশে তখন জরুরি অবস্থা। প্রত্যেক সংবাদপত্রকে পাতা তৈরি করে তা ছাপতে দেওয়ার আগে সরকারি প্রতিনিধিকে তা দেখিয়ে তাতে সরকারি ছাপ্পা লাগানো ছিল একেবারে বাধ্যতামূলক।
সেই ছাড়পত্র দিতেন খোদ মন্ত্রী ও অফিসারেরা। প্রতিদিন নিয়ম মতো অফিস সেরে মন্ত্রী বাড়ি ফিরতেন। তারপর রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে আটটা নাগাদ ফের আসতেন মহাকরণে। তাঁর ঘর ছিল মহাকরণের তিন তলায়। সুব্রতবাবুর মুখ থেকে বহুবার শোনা কাহিনি অনুযায়ী, ভিআইপি লিফটে করে তিনি তিনতলায় উঠেছেন।
লিফট থেকে বেরিয়েই টানা অলিন্দ। সেখানে সাধারণভাবে পুলিশ পোস্টিং থাকে। আসতে যেতে তাঁরা মন্ত্রী-আমলাদের সেলাম ঠোকেন। লিফট থেকে বেরিয়ে সুব্রতবাবু এক পুলিশের মুখোমুখি। প্রতি-অভিবাদন করতে গিয়েই সুব্রতবাবুর চোখ আটকে যায় পুলিশের পায়ের দিকে।
তবে এখানেই থেমে থাকা নয় ২০১৭ সালের জুন মাসে দার্জিলিংয়ে হয়েছিল ক্যাবিনেট বৈঠক। তাতে যোগ দিতে পাহাড়ে গিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল রাজভবনে। রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে সুব্রতবাবু সে বারও দার্জিলিংয়ের রাজভবনে ভূত থাকার আশঙ্কা করেছিলেন। তিনি যে একা ঘরে থাকবেন না সেটাও বলেছিলেন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ভূতের গল্প আর শোনা যাবে না আক্ষেপ সকলের।