মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে রীতিমতো বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড। বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে রাজ্যের বিভিন্ন নদী। ফলে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত সামিল পাহাড়ি ধসও। বৃষ্টির তেজ কিছুটা কমলেও বন্যা ও ধসের বলি বহু মানুষ। আর সেই মৃত্যু মিছিলে রয়েছে উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে যাওয়া হাওড়ার বাগনানের তিন তরতাজা ছেলেও। হাহাকারই এখন সম্বল তাঁদের পরিজনদের।
প্রসঙ্গত, হাওড়ার বাগনানের মুরালিবাড়ের সাগর দে (২৭), সরিৎশেখর দাস (৩৫) ও চন্দ্রশেখর দাস (৩৪) কুমায়ুন রেঞ্জে সুন্দরডুঙ্গায় ট্রেকিংয়ে গিয়ে তুষারধসের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যান। উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে এঁদের সকলের দেহ মিলেছে। বাড়ির লোকের সঙ্গে তাঁদের শেষ কথা হয়েছিল গত ১১ অক্টোবর রাতে। তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন পরের আট-ন’দিন মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবেন। আবার ফোন করবেন ২০ অক্টোবর জাইকুনিতে নেমে। কিন্তু ২০ তারিখ বিকেলেই খবর আসে, উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলার পাহাড় তুষারধসে বিপর্যস্ত। সেই ইস্তক তিনজনেরও কোনও খবর ছিল না। এদিকে, একই ট্রেকিং টিমের অন্যতম সদস্য, বেহালার সাধন বসাকের মৃতদেহ নামিয়ে আনা হচ্ছে।
বাগেশ্বর জেলার এসপি অমিত শ্রীবাস্তব শুক্রবার ফোনে জানান, নিখোঁজ ট্রেকারদের সন্ধানে এদিন ফৌজি হেলিকপ্টার উড়ে গিয়েও ফিরে আসে। কারণ আবহাওয়া খুবই খারাপ। পদাতিক উদ্ধারকারী দল রওনা দিলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। তবে ট্রেকারদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন পোর্টার ফিরে এসে জানিয়েছেন, তাঁরাও সরিৎ, চন্দ্রশেখরদের হদিশ পাননি। ওঁদের টিম গত ১২ অক্টোবর ট্রেকিং শুরু করে সঙ্গে গাইড ও চার পোর্টার নিয়ে। জাগুলি হয়ে ১৪ তারিখে কাঁঠালিয়ায় গিয়ে বেসক্যাম্প করেন। ওখান থেকে কানাকাটা-সহ কুমায়ুন রেঞ্জের বিভিন্ন শৃঙ্গের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। তারই মাঝে দেবীকুণ্ডে ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রাতে ওই ট্রেকারদের মৃত্যুর খবর আসে। রাতেই দেহগুলি উদ্ধার করা হয় কানাকাটা পাসের কাছে।
পেশায় গানের স্কুলের শিক্ষক, বাগনানের সরিৎ বছর দুয়েকের একটি মেয়ের বাবা। তাঁর জ্যেঠতুতো দাদা চন্দ্রশেখরের পারিবারিক ব্যবসা, তিনি বাগনান ১ নম্বর ব্লকের খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যও বটে। আর সাগর পেশায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। সাগর-সরিতের ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও চন্দ্রশেখর কার্যত আনকোরা। সরিতের বাবা তুষার দাস ও সাগরের বাবা সলিল দে-ও ট্রেকার। তাঁরা জানেন, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে বিপদ ওত পেতে থাকে। কিন্তু ভাবেননি, ছেলেদের এমন ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তিন বাড়িতে কার্যত রান্না খাওয়ার পাট চুকেছে। অন্যদিকে, পাহাড়ের টানেই হোমিওপ্যাথ পড়াশোনার পাশাপাশি হাওড়ার ওই ট্রেকিং সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন রানাঘাটের পায়রাডাঙার পূর্ব গোপালপুরের প্রীতম রায়। তাঁর বাড়িতেও এসেছে দুঃসংবাদ। প্রীতমের বাবা প্রমীলকান্তি রায় ও মা রীতাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।