শেষমেশ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা পড়ুয়াদের আন্দোলনের জন্য সরাসরি উপাচার্যের ঘাড়ে দোষ চাপাল গেরুয়াশিবির। তাদের দাবি, উপাচার্যের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জেরে বদনাম হচ্ছে বিজেপি, আরএসএসের। এবার এমন অভিযোগে সরব হল বীরভূম জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবন ‘পূর্বিতা’য় চিকিৎসক সহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে গেলে আন্দোলনরত পড়ুয়ারা বাধা দেয় বলে অভিযোগ। ছাত্রদের দাবি, অসুস্থ সেজে ওই অ্যাম্বুলেন্সে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন উপাচার্য। তিনি আদৌ অসুস্থ কি না তা দেখতে দু’জন ছাত্র প্রতিনিধি চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিতরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ায় চিকিৎসক সহ অ্যাম্বুলেন্স ফেরত পাঠানো হয়েছে। এদিকে এদিনই বিশ্বভারতীর অচলাবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বভারতী একটা গর্বের জায়গা ছিল। এখন নানারকম সমস্যা হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি।” এদিনই নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বভারতীর চলতি অচলাবস্থা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিশ্বকবির নাম জড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানে এধরনের ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দ্রুত অচলাবস্থার অবসান ঘটানো।”
উপাচার্যকে দেখতে আসা চিকিৎসক অনির্বাণ দাশগুপ্ত ও অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নির্দেশে উপাচার্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম। ছাত্ররা বাধা দেওয়ায় আমরা ঢুকতে পারিনি।” তবে উপাচার্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের নির্দেশে শান্তিনিকেতন থানার ওসি মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে রাতে ‘পূর্বিতা’র উদ্দেশে যান। এদিন সকালে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিকদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চলা অচলাবস্থার জেরে উপাচার্যের দায়ের করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশ্বভারতীতে চলা ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহা ও সহ-সভাপতি বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, উপাচার্যের কার্যকলাপের জন্য রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতীর নাম দেশে-বিদেশে যেমন খারাপ হচ্ছে তেমনই রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও কলুষিত হচ্ছে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ‘শিশুপাল’ বলে কটাক্ষ করেন ধ্রুববাবু।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীর তিন পড়ুয়ার বহিষ্কারের প্রতিবাদে চলা ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সহ তৃণমূল ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে শহরজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হয়েছে। এদিন বহিষ্কৃত পড়ুয়া ও আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, উমা সেন, শর্মিলা রায় পোমো, শান্তভানু সেন, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, সুলগ্না মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরা ‘পূর্বিতা’র সামনে প্রতিবাদী মঞ্চে পৌঁছে বহিষ্কৃত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরে শান্তভানু সেন সাংবাদিকদের বলেন, “উপাচার্য যেভাবে বিশ্বভারতীর বদনাম করছেন তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। যেসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করে ওঁর উচিত বিতর্কের ইতি টানা। পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গণের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা ও বিশ্বভারতীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারই ওঁর প্রথম কাজ হওয়া উচিত।”