আফগান মুলুক বলতেই আমাদের মনে পড়ে দুর্গ পাহাড়, অপরিসীম সৌন্দর্য। আফগানিস্তান মানেই পেস্তা, আমন্ড। আফগানিস্তান মানেই কাবুলিওয়ালার জোব্বা থেকে বেরিয়ে আসা কিশমিশ। বস্তুতই বাঙালির ঘরে ঘরে শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটসের যে আকাশচুম্বী কদর, আফগানিস্তান তার পরতে পরতে জড়িয়ে। কারণ, গুণমানে দুনিয়ার সেরা আমন্ড, কিশমিশ, আনজির পেস্তা বা হিংয়ের মতো দুর্মূল্য মশলার জোগানদার ওই পার্বত্য এলাকা। এবং স্বাভাবিকভাবেই আফগান ভূমে তালিবান-রাজ ও উদ্ভূত অশান্তির তুমুল আঁচ এসে পড়েছে কলকাতার ড্রাই ফ্রুটসের বাজারে। এমনিতেই মহার্ঘ পণ্যগুলির দাম আরও চড়ে গিয়ে কার্যত নাগালের বাইরে আমজনতার। উল্লেখ্য, আগস্টের প্রথমে যে আমন্ডের দাম ছিল প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, এখন তা ৯৫০। কিশমিশের দর কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে ঘা খেয়েছে হিং। ১৪০০ টাকা কেজির টাকার হিং এখন বিকোচ্ছে পাক্কা হাজার টাকা বেশিতে, অর্থাৎ ২৪০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ তো সবে শুরু, আগামী দিনে দাম আরও চড়বে।”
প্রসঙ্গত, বড়বাজার রাজাকাটরায় ড্রাই ফ্রুটের পাইকারি বাজার রয়েছে। ড্রাই ফ্রুট ব্যবসায়ী রাজেশ গুপ্তা বলেন, “আফগান থেকে মূলত হিং, কিশমিশ, মুরাক্কা, আনজির পেস্তাবাদাম এগুলি আসে। আফগানি হিং সব থেকে দামি। তালিবান রাজ কায়েম হতে সেখান থেকে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।” তিনি জানান, আফগানিস্তানে তিন রকমের কিশমিশ রয়েছে। কালো, সবুজ এবং বীজ-সহ কিশমিশ। এক কেজি কালো কিশমিশের দাম ছিল ২২০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা। সবুজ কিশমিশের দাম ৬০০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকা হয়েছে। মুরাক্কা (বীজ-সহ কিশমিশ) ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা। আনজির ৭০০ টাকা (প্রতি কেজি) ছিল। এখন ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেস্তার (Pistachio) দামও কেজি প্রতি ৪০০ টাকা বেড়েছে। ১২০০ টাকার পেস্তা এখন ১৬০০ টাকা ছুঁয়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী পবন কুমার জানান, “হিংয়ের দামটা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। ১২০০ টাকা কেজি হিং ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।” তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বাজারে জোগান স্বাভাবিক রয়েছে। আর কিছুদিন পর জোগানে টান পড়বে। তখন বাজার থেকে আমন্ড, পেস্তা, আনজির (Fig) এগুলো উধাও হয়ে যাবে। এদিকে মূল্যবৃদ্ধি হতেই ড্রাই ফ্রুট নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়েছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজার থেকে ড্রাই ফ্রুট কিনে মজুত করে রাখছে। কটন স্ট্রিটের ড্রাই ফ্রুট ব্যবসায়ী মুকেশ বাগাড়িয়া বলেন, “আফগানিস্তান থেকে ড্রাই ফ্রুট দিল্লীতে আসে। সেখান থেকে কলকাতার বাজারে সরবরাহ করা হয়। আফগানিস্তান স্বাভাবিক কবে হবে কেউ জানে না। তাই ব্যবসায়ীরা ড্রাই ফ্রুট কিনে মজুত করে রাখছেন।”