বর্তমানে গোটা দেশজুড়ে করোনার প্রতিষেধকের আকাল। প্রথম প্রথম কেন্দ্রই রাজ্যকে টিকা সরবরাহ করছিল। গত ১মে কেন্দ্রীয় সরকার তার নতুন টিকা নীতি ঘোষণা করে জানায়, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকার খরচ বহন করবে না তারা। তবে টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি থেকে ৫০ শতাংশ টিকা কিনবে কেন্দ্র। ৪৫ বছর বয়সি ও তার ঊর্ধ্বে থাকা করোনা যোদ্ধা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেগুলি বিনামূল্যে সব রাজ্যে পাঠানো হবে। বাকি অর্ধেকের ৫০ শতাংশ কিনবে রাজ্যগুলি এবং শেষ অর্ধেক কিনতে পারবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।
এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন এই টিকা নীতি দেশে টিকা বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে, এমন আশঙ্কা ছিল অনেকের। আশঙ্কা ছিল, নয়া নীতির ফলে টিকা কেনার বিষয়ে রাজ্যগুলি পারস্পরিক প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা এবং প্রভাব খাটিয়ে টিকা কেনার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হবে। অন্য দিকে, সবচেয়ে বেশি দামের আশায় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা বেচতে বেশি আগ্রহী হবে। সেই আশঙ্কাকেই সত্যি করে জানা গেল, মে মাসের মধ্যে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য বরাদ্দ করোনা প্রতিষেধকের প্রায় ৫০ শতাংশ কিনে ফেলেছে দেশের ৯টি বড় হাসপাতাল গোষ্ঠী।
সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ ১.২০ কোটি ডোজের মধ্যে ৬০.৫৭ লক্ষ ডোজই কিনে ফেলেছে দেশের ৯টি নামকরা হাসপাতাল গোষ্ঠী। অ্যাপোলো হসপিটালস্ (১৬.১ লক্ষ), ম্যাক্স হেলথকেয়ার (১২.৯৭ লক্ষ), রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত এইচএন হসপিটাল ট্রাস্ট (৯.৮৯ লক্ষ), মেডিকা হসপিটালস্ (৬.২৬ লক্ষ), ফর্টিস হেলথকেয়ার (৪.৪৮ লক্ষ), গোদরেজ (৩.৩৫ লক্ষ), মণিপাল হেলথ (৩.২৪ লক্ষ), নারায়ণা হৃদয়ালয় (২.০২ লক্ষ) এবং টেকনো ইন্ডিয়া ডামা (২ লক্ষ)। এরা মূলত প্রথম সারির বড় বড় শহরগুলিতে পরিষেবা দেয়। ফলে টিকা কেনার ইঁদুর দৌড়ে ছোট ও মাঝারি শহরগুলিতে ছোট ছোট বেসরকারি হাসপাতালের দৌলতে টিকা মেলার রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মুম্বইয়ের মতো শহরে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলির দাপটে পিছু হটছে মাঝারি ও ছোট বেসরকারি হাসপাতালগুলি। এমনই এক হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তারা প্রয়োজনের তুলনায় কম ভ্যাকসিন পাচ্ছে। উল্লেখ্য, শুরুতেই কেন্দ্রের এই টিকা নীতিকে ‘খামখেয়ালি’ ও অযৌক্তিক বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। বেসরকারি ৯ হাসপাতালের ৫০ শতাংশ টিকা কেনার খবর উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, “আমি প্রথম থেকেই বলছি যে ভ্যকসিন কিনুক কেন্দ্র আর রাজ্য তা বিতরণ করুক। কিন্তু ভ্যাকসিন নীতিতে বৈষম্য এবং নিরপেক্ষতার অভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।”