বাংলায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে মহিলারা আরও সুরক্ষিত থাকবেন, এমন আওয়াজ তুলে প্রচার চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। অথচ মঙ্গলবার মোদী-শাহের হয়ে এমন একজন লড়াই করছেন যিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগে যাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় মামলা চলছে। শুধু তাই নয়, খুন সহ আরও একাধিক গুরুতর ফৌজদারি ধারায় মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর সেই প্রার্থী হলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া বিধানসভা থেকে বিজেপির প্রতীকে লড়াই করা রাজেন্দ্র সাহা ওরফে সোমু।
উল্লেখ্য, অতীতে কখনও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত কেউ কোনও স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোটের ময়দানে লড়াইতে নেমেছেন কিনা, তা মনে করতে পারছেন না রাজনৈতিক গবেষকরা। ধর্ষণে একজন অভিযুক্তকে কীভাবে প্রার্থী করার মতো সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তৃণমূল অবশ্য সুযোগ পেয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তৃণমূলের মুখপাত্র সৌগত রায়ের কটাক্ষ, “রতনে রতনে চেনে। বিজেপি নেতারা তাই হাড়োয়ায় একজন রতনকে চিনেছেন এবং প্রার্থী করেছেন।”
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের কাছে হাড়োয়ার বিজেপি প্রার্থী তিরিশ বছরের রাজেন্দ্র সাহা সোমু যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি জানিয়েছেন, মোট ৭টি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। সাত মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭ গুরুতর ধারা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল ধর্ষণের মামলার। ২০১৯ সালের ৬ই জুলাইয়ের হাড়োয়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা চলছে। মামলাটি বসিরহাটের এসিজেম আদালতে বিচারাধীন। একটি মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগেই ওই মামলা রয়েছে। বিজেপি বাংলাদেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোপালনগর থানায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দান ও তাদের নথিপত্র ছাড়া সীমান্ত পার করাতে সাহায্য করার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টেও মামলা চলছে।
ধর্ষণ-খুনের মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত বিজেপি প্রার্থী অবশ্য মোটেও লজ্জিত নন। বরং সংবাদমাধ্যমকে গলার শিরা ফুলিয়ে তিনি দাবি করেছেন, ধর্ষণ সহ ফরেনার্স অ্যাক্টে যে মামলা রয়েছে তা সবই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। আদিবাসী মহিলাদের নিয়ে আন্দোলন করার পর একজনকে দিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা করা হয়। তাছাড়া বনগাঁ এলাকায় তিনি কোনওদিন যাননি। তা সত্ত্বেও সেখানকার থানায় খুন ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করার মামলা রয়েছে। ধর্ষণ ও খুনের মামলা থাকায় কতটা গর্ব অনুভব করছেন তাও লুকোননি বিজেপি প্রার্থী। তাঁর কথায়, “আমি এখনও ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের মতো বড় নেতা হয়ে উঠতে পারিনি। ওঁর বিরুদ্ধে তো ৬৮টি মামলা রয়েছে।”