প্রথম দফায় রাজ্যের ৩০ আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার, ১ এপ্রিল রাজ্যের ৩০টি আসনে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। এরপরে বাকি আরও ৬ দফা। ২৩৪ আসন। কিন্তু গোটা দেশেরই নজর আগামীকালের দিকে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বিশেষ আসনের দিকে। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে একুশের ভোটের ‘হাইভোল্টেজ সেন্টার’ নন্দীগ্রামের। কারণ এই কেন্দ্রে প্রার্থী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে নেমেছেন তিনি। যিনি মাত্র ৪ মাস আগেও তৃণমূল নেত্রীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক ছিলেন। রাজ্যের একাধিক দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। আর তাই অনেকেই বলছেন, ২১০ নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে আসলে এবার গুরু-শিষ্যের লড়াই।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থান এবং রাজ্যে ২০১১ তে পালাবদলের অন্যতম ভিত নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন। ২০১১ সাল থেকেই সেখানে একচেটিয়া তৃণমূলের আধিপত্য। এতদিন পর্যন্ত সেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। ২০১৬ অর্থাৎ গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের ফলাফলের দিকে যদি একবার তাকানো যায়, তাহলেই সেই ছবি পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী শতাংশের হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন ৬৭.২০ শতাংশ। খাতায়–কলমে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই এর আব্দুল কবীর শেখ শতাংশের হিসেবে ভোট পেয়েছিলেন ২৬.৭০ শতাংশ। এবং মাত্র ৫.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী বিজন কুমার দাস।
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আলাদা। কারণ গত ডিসেম্বরেই দলত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। আর তারপরই সভা করতে এসে মমতা জানিয়ে দেন, একুশে এই আসন থেকেই ভোটে লড়তে চান তিনি। তখন থেকেই যেন রাজনৈতিক উত্তাপে ফুটছে নন্দীগ্রাম। মার্চের মাঝামাঝি থেকেই বিক্ষিপ্ত রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর এসেছে এখান থেকে। প্রচার পর্বেও এখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রামের ২৭০টি বুথই স্পর্শকাতর। কড়া নিরাপত্তায় ভোট করানোর জন্য ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় সেনা পাঠাচ্ছে কমিশন। তবে যা-ই হয়ে যাক, নন্দীগ্রামবাসীর দাবি, এখানে শুভেন্দুকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে বিপুল ভোটে জিতবেন মমতাই।
উল্লেখ্য, একদিকে নন্দীগ্রামের রেয়াপারায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে রয়েছেন মমতা। অন্যদিকে হলদিয়া থেকে নিজের ভোটার কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করে এই কেন্দ্রের নন্দনায়কবরের ভোটার হয়েছেন শুভেন্দু। প্রচারে তৃণমূল নেত্রী যেমন গদ্দার, মীরজাফর-সহ একাধিক ‘বিশেষণে’ বিদ্ধ করেছেন শুভেন্দুকে। তেমনি তৃণমূল নেত্রীকে ‘বহিরাগত’ বলছে বিজেপি। যদিও জনসংযোগের প্রশ্নে কোনও খামতি রাখেননি তৃণমূল নেত্রী। দোলের মেলা থেকে চড়া রোদে রোড শো করেছেন। আবার সিরিয়ালের চেনা মুখ থেকে জনপ্রিয় গায়ক সকলেই এসেছেন ‘দিদির দূত’ হয়ে। এদিকে, হিসেবও বলছে সেই ২০১১ থেকে নন্দীগ্রামের ভোট ঘাসফুলে গেছে। তাই সোনাচূড়া, গোকুলনগর, ভেতুরিয়া, কুলবারি, রেয়াপাড়া, টেঙ্গুয়া, বয়াল, ঘলেপুকুরের মানুষদের দৃঢ় বিশ্বাস, ২ তারিখ শেষ হাসি হাসবেন মমতাই।