আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীঘোষণার বাংলায় পর বনগাঁ মহকুমায় গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শুরু হয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। আভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে কোণঠাসা আদি বিজেপি কর্মীদের কেউ ঘরে বসে আছেন, কেউবা প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক দুলাল বর দলের এসসি মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁ মহকুমায় প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করল সর্বভারতীয় জনসঙ্ঘ। এলাকায় জনপ্রিয় মতুয়া মুখ ও বিজেপির আদি নেতাদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে এই চার কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে বনগাঁ মহকুমায় অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত লোকসভা ভোটে নাগরিকত্ব ইস্যুতে বনগাঁ লোকসভায় বাজিমাত করেছিল বিজেপি। কিন্তু নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি এখনও কার্যকর না হওয়ায় মতুয়া জনগোষ্ঠীর দ্রুত মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। নাগরিকত্ব কার্যকর না হলে এবারের ভোটে যে তার প্রভাব পড়বে এর আগে একাধিক সভায় বলেছেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতায় এসে সুর বদল করেছেন। কিন্তু সাধারণ মতুয়া সম্প্রদায় নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে চরম হতাশ। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁ মহকুমার অন্তর্গত গাইঘাটা, বাগদা, বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রার্থীদের নাম দেখার পর দিকে দিকে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কারণ, গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ির সদস্য তথা সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আদি বিজেপি কর্মীদের অহিনকুল সম্পর্ক। সেখানে শান্তনু ঠাকুরের দাদা সুব্রত ঠাকুর প্রার্থী হওয়ায় পুরনো বিজেপি কর্মীরা মারাত্মক ক্ষিপ্ত। একইভাবে বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা ও স্বরূনগরের প্রার্থী নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে রয়েছে। মতুয়া ভোটের স্বার্থে শান্তনুবাবুর কথামতো প্রার্থী দেওয়ার ঘটনা ঠিকভাবে মেনে নিতে পারেননি বিজেপির স্থানীয় কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে পুরনো বিজেপি কর্মীদের একাংশ ভারতীয় জনসঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁদের মধ্যে দুলাল বরকে গাইঘাটায় প্রার্থী করার প্রাথমিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গাইঘাটায় শুক্রবার বনগাঁ মহকুমার চার কেন্দ্রের পাশাপশি নদীয়া জেলার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার কথা ঘোষণা করেছে ভারতীয় জনসঙ্ঘ। এরফলে বিজেপির নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক ও মতুয়া ভোটে ধস নামার সম্ভাবনা প্রবল।
এই বিষয়ে সর্বভারতীয় জনসঙ্ঘ দলের রাজ্য সম্পাদক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “দীনদয়াল উপাধ্যায় ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দেখানো পথে বিজেপি আর হাঁটছে না। তাদের জনস্বার্থ-বিরোধী একাধিক সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক কার্যকলাপে মানুষ তিতিবিরক্ত। সর্বত্র প্রার্থী নিয়ে চরম ক্ষোভবিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যারা রক্ত ও ঘাম ঝরিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তাঁদের প্রার্থী করা হচ্ছে না। সর্বভারতীয় দলে কেন ভাড়া করে প্রার্থী আনতে হচ্ছে? নানান নীতিগত কারণে আমরা প্রদীপ প্রতীকে রাজ্যের ২২০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুক্রবার বিকেলে বনগাঁ মহকুমার প্রতিটি কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।”
এবিষয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “গাইঘাটায় দুলাল বরকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপি সহ কয়েকটি দলের টিকিট না পাওয়া যোগ্য ব্যক্তি ও দলের ভালো কর্মীকে এবার আমরা প্রার্থী করছি। বিজেপি তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাচ্ছে। সেখানকার বহু ভালো সংগঠকের পাশাপাশি বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা দলে দলে আমাদের কাছে আসছেন। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে যোগ্যদের প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”