এবার ক্রিকেটারদের শক্তি জোরালো করার তর্ক উস্কে দিলেন খোদ ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ক্রিকেট প্রশাসকদের উদ্দেশে নয়া বার্তা দিলেন তিনি। বলে দিলেন, সারা বছরের আন্তর্জাতিক সূচী তৈরি করার ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক ক্রিকেট খেলিয়ে দেশে খেলোয়াড়দের সংগঠন শক্তিশালী এবং সক্রিয়। ভারতে ক্রিকেটারদের সংগঠন জন্ম নিয়েও প্রভাবশালী হতে পারেনি।
কী বলছেন ভারত অধিনায়ক? করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে টানা থাকতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। সেই সঙ্গে ম্যাচ খেলার ধকল। বিরাট মনে করেন, জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকার ফলে দ্রুত ফুরিয়ে আসতে পারে এক জন খেলোয়াড়ের জীবন। তাই তিনি সতর্কবার্তা জারি করছেন। প্রসঙ্গত, অতিমারী আবহের মধ্যেও টানা খেলে যেতে হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে দীর্ঘ আইপিএল খেলে সেখান থেকেই তাঁদের চলে যেতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। লাল বল, সাদা বল মিলিয়ে প্রায় আড়াই মাসের সফর করতে হয়েছিল ক্রিকেটারদের। বিরাট যদিও পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে প্রথম টেস্টের পরেই চলে এসেছিলেন দেশে অস্ট্রেলিয়া থেকেই ফিরেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে ঘরের মাঠে চার টেস্ট, পাঁচটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি ওয়ান ডে ম্যাচের দীর্ঘ সিরিজ খেলতে হচ্ছে ভারতকে। সেই দ্বৈরথ শেষ করে উঠতে না উঠতেই ঢুকে পড়তে হবে আসন্ন আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে। এমন ঠাসা সূচী যে চিন্তার কারণ, সে দিকেই ইঙ্গিত করছেন কোহলি। তাঁর মতে, শারীরিক ধকলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ধকল সামলানো। টানা বলয়ের মধ্যে থেকে ম্যাচ খেলার পরে মানসিক ভাবে ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে ক্রিকেটারদের।
চলতি বছরে ভারতীয় দলের কাছে ওয়ান ডে ক্রিকেটের গুরুত্ব সে ভাবে নেই। কারণ, এপ্রিলে আইপিএল। জুনে টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। তারপর ইংল্যান্ড সফর। অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ খেলার কী প্রয়োজন ছিল? উঠছে প্রশ্ন। ভারত অধিনায়কের জবাব, “ক্রীড়াসূচী তৈরি করা আমাদের হাতে নেই। আমার মনে হয়, কতটা ক্রিকেট খেলছি, সেটা মাথায় রাখা খুব দরকার। এবং, এখনকার এই পরিস্থিতিতে শুধু শারীরিক দিকটা দেখলে হবে না, মানসিক ধকলটাও মাথায় রাখতে হবে।” এখানেই না থেমে তিনি বলে চলেন, “সূচী তৈরি করার ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া উচিত। না হলে ব্যাপারটা এ রকম হয়ে দাঁড়ায় যে, জমাট সূচীর সঙ্গে মানিয়ে নিতেই পারলেই তুমি থাকতে পারবে। যে পারবে না, তাকে বেরিয়ে যেতে হবে। তা হলে তার জায়গা অন্য কেউ নেবে।” পাশাপাশি বিরাট জানান, “আমার মনে হয় না সেটা ক্রিকেট সংস্কৃতির পক্ষে খুব মঙ্গলজনক। আমরা ক্রিকেট সংস্কৃতিকে দিনে-দিনে আরও শক্তিশালীই তো করে তুলতে চাই।” উল্লেখ্য, অতিমারীর মধ্যে ক্রিকেট চালু হলেও মানসিক ধকল সামলাতে না পেরে মাঝপথে সিরিজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন একাধিক ক্রিকেটার।
বিশ্বের ক্রিকেটারমহলের হয়ে প্রশাসকদের কাছে বিরাট আর্জি জানাচ্ছেন, সূচী তৈরির সময় ধকলের কথাটা অবশ্যই ভাবা দরকার। জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে খেলতে গিয়ে দিনের পর দিন হোটেলের মধ্যে বন্দী হয়ে কাটাতে হচ্ছে খেলোয়াড়দের। তাতে মানসিক চাপ বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞদেরও মত। গত অগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই আটকে রয়েছেন। একটা বলয় থেকে বেরিয়ে তাঁরা আর একটা বলয়ে ঢুকে পড়ছেন। কোহলি যদিও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের টেস্টের সময় তৈরি করা বিতর্কিত রোটেশন প্রথা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। টেস্ট জেতানোর পরেও জিমি অ্যান্ডারসনকে বিশ্রাম দিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানোর নীতিতে। বিরাট অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন এই বলে যে, “এটা ওদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।”