একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আরেকদিকে ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। তাই রাজনৈতিক মহলের মত, সেয়ানে সেয়ানে টক্কর লেগেছে নন্দীগ্রামে। জয়ের জন্য কোনও চেষ্টায় কসুর রাখছে না কোনও পক্ষই। এক দিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্য দিকে তেমনই তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী শুভেন্দু অধিকারী। ভোটের ময়দানে দু’জনেই ‘ওজনদার’। আর দু’জনেই প্রচারে জোর দিচ্ছেন জোরকদমে। আর এই প্রচারে মমতা জোর দিচ্ছেন দলীয় তারকাদের উপরই। কারণ, রাজনীতির কথা বিশদে তিনি নিজেই বলছেন। এবং তিনি মনে করেন, সে কথা তাঁর চেয়ে ভাল তাঁর দলের আর কেউই বুঝিয়ে বলতে পারবেন না।
নন্দীগ্রামে দু’টি ব্লক রয়েছে। নন্দীগ্রাম ১ এবং নন্দীগ্রাম ২। ওই দুই ব্লকে মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। শুভেন্দু পরিকল্পনা করেছেন, বিজেপি-র ওজনদার নেতাদের নিয়ে ওই ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৭টি রোড-শো করবেন। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, জনসংযোগের মাধ্যম হিসেবে রোড-শো অনেক বেশি ‘লাভজনক’। বিশেষত, তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মুখ্যমন্ত্রী মমতা যখন পায়ে চোট পেয়ে হুইলচেয়ারে বন্দী। ওই অবস্থায় তাঁর পক্ষে রোড-শো করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন বিজেপি নেতারা। তবে এর মধ্যেই মমতা একদিন হুইল চেয়ারে বসে বসেই ময়দানের গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলে প্রয়োজনে মমতা নন্দীগ্রামেও হুইল চেয়ার নিয়ে মিছিল করতেই পারেন। কিন্তু তৃণমূলের তরফে আপাতত ঠিক হয়েছে, শুভেন্দুর ওই ১৭টি রোড-শোয়ের পাল্টা ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে ১৭ জন ‘তারকা’ দিয়ে পাল্টা প্রচার করাবে তৃণমূল।
এমনিতেই তৃণমূলের অন্দরে তারকার অভাব নেই। বিজেপি এই বিধানসভা ভোটের আগে দলে তারকাদের নিলেও তৃণমূল সে বিষয়ে তাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এখনও তৃণমূলের ভাঁড়ারে তিন তারকা সাংসদ রয়েছেন- দেব, মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। তাঁদের পাশাপাশিই রয়েছেন অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়। যিনি দেব-মিমি-নুসরতের আগেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। তা ছাড়াও এ বারের ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, কাঞ্চন মল্লিক প্রমুখরা। রয়েছেন রাজ চক্রবর্তীও। এঁরা যেমন সেলুলয়েডের তারকা, তেমনই রয়েছেন টেলিভিশনের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও।
তাঁদেরও আনা হবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারে। মমতা নন্দীগ্রামে আনতে চান লাভলি মৈত্র, রণিতা দাস, শ্রীতমা মুখোপাধ্যায়দের মতো টেলিভিশনের অতিপরিচিত মুখদেরও। আছেন কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সীও। এঁদের মধ্যে লাভলি এবং অদিতি নিজেরাও ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। লাভলিকে মমতা টিকিট দিয়েছেন সোনারপুর দক্ষিণ আসনে। সেখানে গত লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়েছিল তৃণমূল। ফলে মমতার হয়ে একদিন তিনি নন্দীগ্রামে প্রচারে আসতেই পারেন। এখন দেখার, নন্দীগ্রামের পথে কবে তৃণমূলের তারকা সমাবেশ হয়।