বিধানসভা নির্বাচনের আগে ক্রমশ ফাটল ধরছে বিজেপির অন্দরে। আদি-নব্য দ্বন্দ্বে একেবারে জেরবার পদ্মশিবির। দলবদলু নেতাদের বিজেপিতে প্রার্থী করার চেষ্টা হলে বিদ্রোহ শুরু করবে দলের আদি কর্মী-সমর্থকেরা। দলের ভেতরে এবং প্রকাশ্যে এমনই হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু করেছে শিলিগুড়ির গেরুয়া শিবিরের একাংশ। তাঁদের কথায়, আজ দলের জনভিত্তি বাড়ছে। সেই সুযোগে কিছু লোক দলে নাম লেখাচ্ছে। আর সেই ‘ভাড়াটে’-দের নিয়ে মাতামাতি করছে দলের কেউ কেউ। এসব আমরা একেবারেই মানব না।
আসলে শিলিগুড়িতে দীর্ঘকালের সিপিএম নেতা শঙ্কর ঘোষ সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তারপরই ভোটে তাঁর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় আদি বিজেপি নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তবে শুধুই শিলিগুড়ি নয়, তার পাশাপাশি মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিজেপিতে আদি ও নব্যদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার শিলিগুড়িতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র হাত থেকে পতাকা তুলে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ। অন্যদিকে, দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি আসনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে নিতেশ সুনদাসের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বিভিন্ন মাধ্যমে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে তাঁর সমর্থনে প্রচারও চলছে।
এটাই মেনে নিতে পারছেন না আদি বিজেপিরা। তাঁদের কথায়, নিতেশ সুনদাসকে এলাকার মানুষ চেনে না। তিনি জিটিএর আধিকারিক ছিলেন। দার্জিলিংয়ের এমপি রাজু বিস্তের ঘনিষ্ঠ বলে তাঁরা শুনেছেন। এভাবে এঁদের মতো ভাড়াটেদের প্রার্থী করে ভোটে জেতা যায় না। এতে দলের পুরনো দিনের যোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে যায়, সংগঠনও দুর্বল হয়। সত্যি সত্যি এঁরা বিজেপির প্রার্থী হলে তাঁরা যে তা মেনে নেবেন না, তাও জানিয়ে দিয়েছে আদি বিজেপির একটি বড় অংশ।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাই নিয়েও বিজেপিতে ক্ষোভপ্রকাশ শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন্দ্র বসু। সেই মতো তিনি সাংগঠনিক কাজকর্মও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেখানে শিখা চট্টোপাধ্যায় সহ আরও কিছু নাম চলে আসায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আর এতেই আদি বিজেপিরা অসন্তুষ্ট। তাঁদের আশঙ্কা এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আদি বিজেপি নেতা বলেন, জেলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য আমাদের এমপিরা বাইরে থেকে এসে এখানে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। যাঁরা লড়াই করে তাঁদের ভোটে জিতিয়ে এমপি করেছেন, এখন তাঁদেরই উপেক্ষা করা হচ্ছে। যোগ্য দাবীদার হয়েও দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদককেও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। অন্যায়ভাবে এক-দু’জন এমপি’র ছড়ি ঘোরানোর জন্যই দলের আদি কর্মীরা অপমানিত হচ্ছেন।