অর্জুনের রথে কৃষ্ণ ছিলেন সারথি, যুদ্ধে জয় হয়েছিল তার। আর শনিবার আপনারা চড়ে বসলেন অমিত শাহ’র পাঠানো ফ্যালকন নামে এক আকাশরথে। যার মালিক এক ব্যবসায়ী। কোন লড়াইয়ের ময়দান নয়, আপনাদের গন্তব্য, বিজেপি নামক এক সাম্প্রদায়িক দল। যে দলের সারথি দাঙ্গা, ধর্মান্ধতার অভিযোগে অভিযুক্ত মোদি-অমিত জুটি! শুরুতেই আপনারা হেরে বসে থাকলেন!
দল, সংগঠন কোনটাই কিন্তু উড়ে গিয়ে জুড়ে বসার মত ব্যাপার নয়। রাজনীতিতে আপনাদের আগমন ও উত্থান দুটোই আমি ৪০ বছরের সাংবাদিক জীবনে দেখেছি। আমি দেখেছি বাংলার জননেত্রী শিশুদের হাঁটতে শেখার মত আপনাদের লড়াই, রাজনীতি, সংগঠন শেখানোর চেষ্টা করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন, নেতৃত্বে তুলে এনেছেন, মন্ত্রিত্বও দিয়েছেন। আপনাদের এখনকার রাজনৈতিক অধঃপতন দেখে মনে হচ্ছে সবই ভস্মে ঘি ঢালা হয়েছে। এতকিছুর পর শেষমেশ বিজেপি!
আপনাদের জন্য আমার কষ্ট হয়, সংগ্রাম থেকে পৌঁছলেন ষড়যন্ত্রে, ঐক্য থেকে পৌঁছলেন বিভেদে, আলো থেকে পৌঁছলেন সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার অন্ধকারে। ক্ষমতার মোহে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বদলে বিজেপি নামক এক দানবিক শক্তির ঘাটে নৌকা বাঁধলেন! দল করা একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতন্ত্রে প্রতিটি মানুষেরই পছন্দসই দল বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু আপনারা যা করলেন সেটা বেইমানি। বিজেপি ক্ষমতায় আসছে এই মিথ্যা প্রচারে ভুলে ব্যাক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির আশায় বিজেপিতে যোগ দিলেন আপনারা।
এতদিন জননেত্রীর সঙ্গে থেকেও তার মূল শিক্ষাটা বুঝলেন না আপনারা। তিনি কোন দল ভাঙেননি, দলের মধ্যে থেকে দল ভাঙার কোন চক্রান্তও করেননি। কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করবে না এই উপলব্ধির পর তিনি নতুন দল গড়েছিলেন। অন্য কোন দলে যোগ দেননি। কারণ তার লড়াই ছিল দলের আদর্শ ও পথ নিয়ে। সেসময় বাংলার কোন দলই শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রকৃত লড়াই করছিল না। তাই নতুন দল গড়ার দরকার ছিল। আর আপনারা পদ ও ক্ষমতার মোহে দল ছেড়ে সরাসরি যোগ দিলেন এতদিন যাদের বিরোধিতা করেছিলেন সেই বিজেপিতে!
আপনাদের দল বদল দেখে আমার ফুটবল প্লেয়ারদের দল বদলের কথা মনে পড়ছে। প্লেয়ার তোলার মত প্লেনে তুলে আপনাদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হল। আপনাদের দলছুট হওয়ার ধাক্কায় আজকের রাজনীতিতে অর্থের নির্লজ্জ প্রদর্শনী আরেকবার সামনে এল। একটা কথা মাথায় রাখবেন, বাংলার মানুষ কিন্তু বিত্তের প্রদর্শনী পছন্দ করেননা। যারা অর্থ ও টাকার লোভে বিক্রি হয়ে যান, ঘৃণা করেন তাদের। এই ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ এবারের ভোটেই আপনারা দেখবেন।
একটু লক্ষ্য করলেই আপনারা দেখতেন বিজেপি শুধু আপনাদের মত লোভী নেতাদেরই নয়, তৃণমূলের স্লোগান পর্যন্ত চুরি করেছে। তৃণমূলের সোনার বাংলা, নয়া বাংলা এসব স্লোগানও চুরি করেছেন তারা। এমনকি জনসংযোগের ক্ষেত্রেও তারা দিদির প্রচারের ঢঙের কপি করছেন। কিন্তু মানুষের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা নেই বলে তাদের মুখে মানুষের কথা, ভূতের মুখে রামনামের মত শোনাচ্ছে।
ধরেই নিলাম আপনাদের অনেক অভিযোগ আছে। হয়তো তা সত্যিও, কিন্তু তার জন্য দল ছাড়ার দরকার হল কেন? দলে মেটানো যেত না? আর সেই অভিযোগ ও অপ্রাপ্তি যে বিজেপিতে গিয়ে মিটবে এমন কোন ব্যাখ্যাও আপনারা দিতে পারেননি। বলতে পারেননি বিজেপির কোন কর্মসূচির সাফল্য আপনাদের অনুপ্রাণিত করেছে। ঘুরিয়ে দিয়েছে মানুষের জীবনের মোড়। দলত্যাগের কারণ হিসেবে সত্যিই আপনাদের ঝুলিতে কিছু নেই। প্রকাশ্য তর্কে প্রমাণ করুন কোন নিরিখে বিজেপি তৃণমূলের থেকে ভালো? আমি জানি আপনারা সে রাস্তায় হাঁটবেন না। সে এলেম আপনাদের নেই। কারণ আপনারা বিজেপিতে কোন উন্নত আদর্শকে সামনে রেখে যাননি, গিয়েছেন স্রেফ পদ ও ক্ষমতার লোভে।
একটা কথা আপনাদের পরিস্কার বলে রাখি, সব ক্যালকুলেশন তুচ্ছ করে এবারও রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসবে। আবার প্রমাণিত হবে বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা ও লড়াইয়ের ক্ষমতা। আপনাদের অবস্থা দেখে সেদিন সত্যি কষ্ট হবে আমার। তৃণমূলকে হঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিজেপিতে আপনাদের অবস্থা দেখে শেয়াল-কুকুরও কাঁদবে। সেদিন আপনাদের দিদির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তার বাড়ির কাছে ট্রামলাইনের ধারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাবে। কিন্তু মানুষ ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে আপনাদের দিক থেকে। বাংলা বেইমানদের কোনদিন ক্ষমা করেনি।