সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রের ছক কষা হয়েছিল। এই অভিযোগেই দ্রুত ৭০ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল টুইটার। সোমবার একটি ব্লগের মাধ্যমে একথা ঘোষণা করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, ওই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে গত সপ্তাহে ক্যাপিটাল হামলার ছক তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে টুইটার। সোমবার তারা এ বিষয়ে তারা অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে তার পিছনে ওই টুইটার অ্যাকাউন্টগুলির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলেই মিলেছে প্রমাণ। এমনকী গত শুক্রবার থেকে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। যার জেরে পাকাপাকিভাবে এখনও পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ।
আবার এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের অভিযোগ আনতে বদ্ধপরিকর হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। মার্কিন ক্যাবিনেট ও বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে তিনি সাংবিধানিক শক্তি প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে পদচ্যুত করতে চাপ দিচ্ছেন, সূত্র অনুযায়ী খবর মিলেছে এমনই। পেলোসির বক্তব্য, ক্যাপিটাল কাণ্ডের পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, গণতন্ত্রের প্রতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ট্রাম্প। তার জেরে সোমবার হাউসে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে বরখাস্ত করতে প্রস্তাব পেশ করেছেন। ক্যাপিটাল কাণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহে প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন পেলোসিরা। তাঁদের দাবি, হামলার আগেই একটি সভায় ভাষণ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই উসকানিমূলক বক্তব্যের জেরেই তাঁর সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে ক্যাপিটলে হিংসা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, এমনই অভিযোগ পেলোসিদের। কাজেই ট্রাম্পকে সরাতে বদ্ধপরিকর পেলোসি। সহকর্মীদের পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি সওয়াল করেন, প্রথমে ভোটের মাধ্যমে ঠিক করতে হবে যে, পেন্সকে ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে সরতে বলা হবে কি না। তা না হলে চব্বিশ ঘণ্টা পরে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট নিয়ে আইনি পথে যাবে মার্কিন হাউস। ভারতীয় সময়ে সোমবার রাত সাড়ে ন’টায় প্রস্তাব পেশ হয়। তবে, ভোট আগামী বুধবার হবে, এমনই ধারণা হাউস রুলস চেয়ারম্যান জিম ম্যাকগভার্নের।
প্রসঙ্গত, দু’জন রিপাবলিকান সেনেটরও বলেছেন, ক্যাপিটাল তাণ্ডবের জেরে ট্রাম্পের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। এঁরা, পেনসিলভেনিয়ার প্যাট টুমি এবং আলাস্কার লিসা মুর্কোস্কি। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের অনেকের মতে, ট্রাম্পের প্রশাসনে প্রত্যাবর্তনের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। ক্যাপিটাল কাণ্ডের জেরে রিপাবলিকানদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিচ্ছে ব্লু ক্রস, সিটিগ্রুপের মতো কর্পোরেট সংস্থাগুলি। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর শেষ দিন কাদের ক্ষমা করবেন, সেই তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন ট্রাম্প। সূত্রের খবর, নিজেকেও ক্ষমাপ্রাপ্তের তালিকায় রাখতে পারেন তিনি। এ ছাড়া তালিকায় আছেন হোয়াইট হাউসের কয়েকজন সিনিয়র কর্মী, ট্রাম্প পরিবারের সদস্য এবং বিখ্যাত র্যাপ তারকারা। তবে ট্রাম্প নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এমন পদক্ষেপ তাঁর রাজনীতিতে ফেরাও কঠিন করে দিতে পারে। কারণ এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেবেন যে, তিনি অপরাধী।
উল্লেখ্য, সোমবার হোয়াইট হাউস ওয়েবসাইটে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি-পত্নী মেলানিয়া ট্রাম্প লেখেন, ক্যাপিটাল কাণ্ডে তিনি হতাশ এবং দুঃখিত। ‘এই দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাকে ঘিরে গুজব রটছে। আমাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। এই সময়টা আমাদের দেশ ও নাগরিকদের নিরাময়ের সময়। এটাকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য যেন ব্যবহার না করা হয়।’ জানিয়েছেন মেলানিয়া।