কোভিড অতিমারীর জেরে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতেই মন্দা নেমে এসেছে। তবে বিশ্বজুড়ে করোনাকালে আর্থিক ক্ষতি হলেও চীনের অর্থনীতির উপর খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি এই মারণ ভাইরাস। অতিমারীর ছায়া পিছনে ফেলে ২০২৮ সালেই আমেরিকাকে ছাপিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসবে চীন। নিজেদের বার্ষিক রিপোর্টে এমনটাই দাবি করেছে ব্রিটেনের অন্যতম শীর্ষ অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইকনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ’। তারা আরও জানিয়েছে, আর্থিক শক্তিবৃদ্ধির নিরিখে বিশ্বের অন্যতম দুই ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের অবস্থান পাল্টালেও, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জাপানের অবস্থান পাল্টানোর তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে ২০৩০ সালের শুরু দিকে তাদের টপকে তৃতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে ভারত। সে ক্ষেত্রে জার্মানি চতুর্থ থেকে পঞ্চম স্থানে চলে আসতে পারে। এই মুহূর্তে বিশ্বতালিকায় ব্রিটেন পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ২০২৪ সাল নাগাদ তারা নেমে যেতে পারে ষষ্ঠ স্থানে।
ব্রিটেনের ওই সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, কোভিড অতিমারীর প্রকোপ সত্ত্বেও যথেষ্ট তাড়াতাড়ি ছন্দে ফিরেছে চীনের অর্থনীতি। অন্যদিকে, আমেরিকার অর্থনীতি এখনও বিশ বাঁও জলে। এই তফাতেল জন্যই দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতে পারে চীন। করোনা আবহে চীনের বর্তমান আর্থিক বৃদ্ধির তেমন হেরফের হয়নি। অন্য দেশ যেখানে এই সমস্যা কাটাতে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেখানে তাদের অবস্থা অনেকটাই সন্তোষজনক। কাজেই এই ফারাকই এগিয়ে দেবে চীনকে, ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি। শনিবার তাদের প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘বেশ কিছু বছর ধরেই চীন এবং আমেরিকার মধ্যে অর্থনৈতিক এবং ক্ষমতার লড়াই চলে আসছে। কিন্তু নোভেল করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভুত অতিমারি পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সময়মতো লকডাউন ঘোষণা করে দক্ষ হাতে কোভিড পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে চীন। অন্যান্য দেশের তুলনায় তাড়াতাড়ি অতিমারীর প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলেও দাবি করেছে ওই সংস্থা। ফলত অর্থনীতিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। উহান বাদে চীনের অন্য প্রদেশেও সেভাবে ছড়ায়নি কোভিড। ফলে দেশের নিরিখে আর্থিক ক্ষতির মুখও তেমনভাবে দেখতে হয়নি দেশবাসীকে। আগামী কয়েক বছরে চীনের গড় আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও প্রকাশ করেছে ওই সংস্থা। তারা জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৫.৭ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে চীনের। ২০২৬ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমলেও, ওই ৪ বছরে অন্তত ৪.৫ শতাংশ করে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে বলেও আভাস মিলেছে।
উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক শক্তিবৃদ্ধির তালিকায় এমন পরিবর্তনের ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল জাপানের সেন্টার ফর ইকনমিক রিসার্চ। ডিসেম্বরের শুরুতে তারা জানিয়েছিল, ২০২৮ অথবা ২০২৯ সালের মধ্যেই আমেরিকাকে ছাপিয়ে যাবে চীন। কোভিড সঙ্কট কাটিয়ে ২০২১ সালে আমেরিকার অর্থনীতি ছন্দে ফিরবে বলেই এত দিন মনে করছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু এই মুহূর্তে সে দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিবছর আমেরিকার আর্থিক বৃদ্ধি ১.৯ শতাংশ করে কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার পর থেকে প্রতিবছর ১.৬ শতাংশ করে আমেরিকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি কমতে পারে। যা আমেরিকার কাছে অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।