আজ উত্তরবঙ্গে পা রেখেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন যে, সেখানে সংগঠন আরও পোক্ত করা এবং দলের অন্দরে ফাটল রোখাই এখন তাঁর মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বেসুরো বাজছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়িতে পা রাখার পর প্রথমেই বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন। সেখানে অনন্তদেব নিজেও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে সবাইকে একতার বার্তা দিলেন একুশের আগে।
একইসঙ্গে স্পষ্ট বার্তাও দিলেন, দলে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ রাখা যাবে না। দলের সব সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করে চলতে হবে। আর সরকারের উন্নয়নের সুফল যাতে মানুষ পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে জেলার নেতাদেরই। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিকে সফল করতে হবে, মানুষের কাছে গিয়ে এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং কর্মসূচিতে যুক্ত করতে হবে। সোমবার বৈঠকে মমতার বার্তা এমনই। আর বৈঠকে এহেন বার্তার পর ‘ক্ষুব্ধ’ নেতারাও আশ্বস্ত।
সোমবার কলকাতা থেকে বাগডোগরা হয়ে বিকেলে জলপাইগুড়ি পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল এবিপিসি মাঠে কর্মীসভা তাঁর। তৃণমূল দল গঠনের পর জলপাইগুড়িতে এসে এখানেই প্রথম সভা করেছিলেন মমতা। আর এবারও মেদিনীপুর, রানিগঞ্জ ও বনগাঁর পর উত্তরবঙ্গে এটাই প্রথম সভা। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার কর্মীদের বার্তা দেবেন তিনি। কিন্তু তার আগেই দুই জেলায় দলের পদাধিকারীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন মমতা।
এদিকে, আজকের বৈঠকের পর সম্প্রতি ‘বেসুরো’ অনন্ত দেব কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা যেভাবে সবাইকে ভোটের আগে মান অভিমান বা ক্ষোভ বিক্ষোভ সরিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামতে বলেছেন তাতে আশ্বস্ত বিক্ষুব্ধরা। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দুই গোষ্ঠী গুরুং ও তামাং তৃণমূলকে সমর্থন করায় ডুয়ার্স এলাকায় কিছু কেন্দ্রে এর সু-প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোহন শর্মা। তবে তার আগে দলের দুই জেলার নেতৃত্বকে একজোট রাখা যে জরুরি সেটা স্পষ্ট। সে কারণেই মমতার এদিনের দুই বৈঠক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর পাশাপাশি, আগামীকালের দলীয় কর্মীসভায় মমতা কী বার্তা দেন সেদিকেও নজর থাকবে। এই সভার পরেই মমতা কোচবিহার যাবেন। সেখানে বিকেলেই দুটি সরকারি কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। বুধবার রাসমেলা মাঠে দলের কর্মীসভায় বক্তব্য রাখবেন। ওই জেলার ক্ষেত্রেও স্থানীয় নেতৃত্বকে সমন্বয়ের বার্তা যে তিনি দেবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। এবার এই উত্তরবঙ্গ থেকে যাতে নিরাশ না হতে হয়, তার জন্য মমত বিশেষ বার্তা দেবেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।