লকডাউন পর্যায়ের পরে ফের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বাংলার মানুষ। তবে করোনো ইস্যুতে রাজনৈতিক তরজা ও চাপানউতোর চলছে এখনও। আজ কোভিড সংক্রমণ ও মোকাবিলা ইস্যুতে ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে তুমুল কটাক্ষ করল তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় ও তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন।
আজ তৃণমূল ভবনে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে শান্তুনু বেশ কড়া নিন্দার তির ছুঁড়লেন বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। জানালেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অকর্মণ্যতা ও গাফিলতির জন্যই ভারতে কোভিড পরিস্থিতি আরও দুর্দশার দিকে এগিয়ে গেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের তাড়াহুড়োয় ঘরে ফেরানোর ফলে গ্রামীণ এলাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। অতিমারীর সময়েও পিপিই আর মাস্ক নিয়ে বাংলাকে সঠিক সহায়তা করেনি কেন্দ্র। এমনকী লকডাউনের আগে ও পরে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৩৮ লক্ষ পিপিই-এর জায়গায় মাত্র ৯ লক্ষ মজুত ছিল। রাজ্যকে টেস্টিং কিট তৈরিতে বাধা দিচ্ছিল কেন্দ্র। এবং জার্মানিতে পাঠানো কিট তৈরির অর্ডারের সঠিক আর্থিক হিসেবও দেয়নি তারা।
শান্তনু আরও জানান, “আজ ইন্টারন্যাশনাল হেলথ কভারেজ ডে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, গত ৭ই অক্টোবর প্রকাশিত গ্লোবাল হেথ ইনডেক্সে ১৫৮টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৫৫, যা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের থেকেও পিছিয়ে। ভারত জিডিপির ১.৩% খরচ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। আর বাংলায় ২০১০ সালে বাজেট অ্যালোকেশন ছিল ৩৪৪২ টাকা, যা মমতা সরকারের আমলে বেড়ে ১১২৮০ কোটি টাকা হয়েছে। হাসপাতাল বেড়েছে ৪৬%, ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যাও অনেক বেশি। মেডিক্যাল কলেজ ১০ থেকে বেড়ে ১৮টা হয়েছে তৃণমূল আসার পর। মেডিক্যাল সিট ২০১১ সালে ছিল ১৩৫৫। এখন তা ৪০০০। শিশু মৃত্যুর হার ৩২ থেকে কমে হয়েছে ২২। মাতৃমৃত্যু ১১৭ থেকে কমে ৯৮। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ৬৮% থেকে বেড়ে ৯৯.৫%-এ এসে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরো দাবি করেন যে, এত বড় উৎসব দুর্গাপূজা ও কালীপূজার পরেও বাংলায় তেমন বাড়েনি কোভিড কেস। অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই উন্নতি করেছে বাংলা। এবং ভারতে বাংলাই একমাত্র রাজ্য, যেখানে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূচিত ‘স্বাস্থ্যসাথী’র মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ মূলত ‘স্বাস্থ্যসাথী’কে নকলের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা, এমনটাও দাবি করেছে তৃণমূল। জানিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী পুরোদস্তুর নিখরচায় মিলবে, কিন্তু আয়ুষ্মান ভারতে প্রতি পরিবারকে ৩০ টাকা করে দিতে হবে প্রিন্টআউট নেবার জন্য। আয়ুষ্মান ভারতে রাজ্যকেই দিতে হবে ৪০% টাকা।
কেন্দ্রের নতুন টিকাকরণ নির্দেশিকাকেও কড়া সমালোচনা করেছেন শান্তনু। তাঁর মতে, সবার টিকাগ্রহণের অধিকার রয়েছে। টিকাপ্রদানের জন্য ভোটার তালিকা কখনোই মাপকাঠি হতে পারে না। এমনিতে সারা বছর যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলে, তা সকলের জন্য। কোভিড ভ্যাকসিনের বণ্টনপদ্ধতি নিয়ে প্রথম থেকেই ধোঁয়াশা রয়েছে। যা চলছে, তাতে করোনার মতো জীবনদায়ী প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজনীতির বাইরে কিছুই ভাবতে পারছে না, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রধানমন্ত্রী এত এত কথা বললেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনও কেন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিতে পারছেন না, এই প্রশ্ন তুলেও কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করেছেন তিনি। এমনকী এই প্রসঙ্গে কথার সূত্র ধরে বলেন, সিবিআই-ইডি-আইবিআই-ইলেকশন কমিশন-আইসিএমআর, ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয় দপ্তরগুলিও এখন চলছে কেন্দ্রীয় সরকারের ইশারায়।