আজ তৃণমূলের ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ – শান্তনু সেন ও সৌগত রায়। দীর্ঘ আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর চলে নানা বিষয় নিয়ে। দুজনেই সুর চড়ান কেন্দ্রীয় সরকারের নানারকম কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। কোভিড ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে কেন্দ্রকে বেশ কড়া কথায় বেঁধেন শান্তনু। পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ইতিবাচক দিকগুলি নিয়ে কথা বলেন। এসবের পাশাপাশি রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কর্মসংস্থান ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে সাংবাদিক ও জনগণকে ওয়াকিবহাল করেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
“আজকাল ভালো খবর খুব কমই সংবাদপত্রের শিরোনামে আসে। প্রচারসন্ধানী লোকেদের বিষয় আর কেবল নেতিবাচক সংবাদগুলি শিরোনামে আসে। আমি সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করছি ইতিবাচক খবরগুলো উপস্থাপন করার জন্য।” জানান সৌগত। এও বলেন যে, বাংলার তরুণ-তরুণীরা মমতার উপর অগাধ বিশ্বাস রাখে। কারণ, তৃণমূল আমলে প্রায় এক কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে বাংলায়। ভারতের বেকারত্ব ২৪% হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাতেও ৪০% কমেছে বেকারত্ব। ২০১০ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিও বেড়েছে ১৭৫%। ২০১১ সাল থেকে আইটি সেক্টরে চাকরি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই সরকারের।
বাংলার সিলিকন ভ্যালি আইটি হাবের বিকাশ নিয়ে সাংবাদিকদের জানান সৌগত। বলেন যে, ২০১০ সাল থেকে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মসংস্থান ৯০০০০ থেকে বেড়ে ২.১০ লক্ষেরও বেশিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৩৩%। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাও ৫০০ থেকে বেড়ে ১৫০০ ছাড়িয়েছে। টিসিএস, উইপ্রো, কগনিজ্যান্ট, আইবিএমের মতো সংস্থা আছে এখানে। টিসিএসে সম্প্রতি ৪৪০০০ কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের জন্য মোট কর্মসংস্থান হবে ৬১ হাজারেরও অধিক, যা টিসিএসের ব্যাঙ্গালোর অফিসের চেয়ে বেশি। অ্যামাজন লজিস্টিক হাবে ২০ হাজার, কগনিজ্যান্টে ২০ হাজার, আইবিএমে ১৫ হাজার ও উইপ্রোতে ১০ হাজার নিয়োগ হয়েছে, জানিয়েছেন সৌগত। এছাড়া, টায়ার-২ ও টায়ার-৩ শহরগুলিতে ইতিমধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে ১৮টি আইটি পার্ক, যা প্রায় ৮০% সম্পূর্ণ। তিনি এও জানান, ক্যাবিনেটে গত ১লা ডিসেম্বরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য ২০টি নতুন আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। ফলত, ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে ও ৯ হাজারের কাছাকাছি কর্মসংস্থান হবে। এছাড়াও অতিসম্প্রতি তাজপুরের অনুমোদিত হয়েছে গভীর সমুদ্র বন্দর, যেখানে সৃষ্টি হবে প্রায় ২৫ হাজার কর্মসংস্থান।
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরির দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলার সরকার প্রবর্তিত ‘কর্মভূমি’ প্রকল্প সম্বন্ধেও সাংবাদিকদের ওয়াকিবহাল করেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ। এও জানান, “ব্যবসার জন্য লক্ষ ২০০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা, ২ লক্ষ যুবককে ‘কর্মসাথী’ প্রকল্পের অধীনে কাজের জন্য ২ লক্ষ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হয়েছে। যুবশ্রীর অধীনে ১ লক্ষ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে ও কাজে যোগদানের আগে মাসিক ভাতা হিসেবে ১৫০০ টাকাও দেওয়া হয়েছে।” দক্ষতা বিকাশের উন্নয়নে ‘উৎকর্ষ বাংলা’র অধীনে ৬ লক্ষ যুবক লাভবান হয়েছেন বলে দাবি সৌগত রায়ের। এছাড়া তিনি এও জানান যে, ২০১০ সালের পর থেকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প ও খেলাধুলোর বাজেট ১৪ হজার কোটি থেকে প্রায় তিনগুণ বেড়ে ৩৭ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
পাশাপাশি জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মাকে ‘বিজেপির দূত’ বলে কটাক্ষ করেন সৌগত। প্রসঙ্গত, গতকাল রেখা শর্মা দেখা করতে গিয়েছিলেন বাংলার অধুনা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে। এই ঘটনাকেও কটাক্ষ করে তিনি। “ওনারা তথ্য সম্পর্কে সচেতন নন। আমি দুটো তথ্য পেশ করছি আপনাদের জন্য।” এই বলে সাংবাদিকদের সামনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। তা অনুযায়ী, লক্ষ জনসংখ্যার হিসেবে বাংলায় অপরাধের হার ১৫২। যেখানে সেই হার দিল্লীতে ১৪৫৭, সুরাটে ১৩১৭, ও আমেদাবাদে ৮২৬-এ দাঁড়িয়ে। এছাড়া মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা গত ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে যথাক্রমে ৫৬%, ৩৯%, ৩৩% হারে বেড়েছে। কিন্তু বাংলা এক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যতিক্রমী। ২০১৪ সালের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলায় মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার কমেছে অনেকেটাই, ২১% হারে।